সামাজিক অনুষ্ঠান

আমাদের সমাজে অনেক ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান প্রচলিত আছে। এই অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে যেগুলো ইসলামী সংস্কৃতির মধ্যে সেগুলো উদযাপন করা আমাদের জন্য শুধু জায়েজ-ই নয় বরং কোরআন-হাদীসে এই অনুষ্ঠানগুলো উদযাপনের জন্য অনেক বেশী উৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন- ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, শবে মেরাজ, শবে কদর, সীরাতুন্নবী (সা:), মাহে রমযান ইত্যাদি।
আমাদের সমাজে কিছু সামাজিক অনুষ্ঠান প্রচলিত আছে যেগুলো ইসলামী সংস্কৃতির মধ্যে নেই কিন্তু বর্তমানে মানুষ সওয়াবের নিয়তে এই অনুষ্ঠানগুলো পালন করে থাকে। যেমন মিলাদ-মাহফিল, মৃত্যুবার্ষিকী, শবে বরাত, চল্লিশা, পীর-ফকির, মাজার পূজা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় এই অনুষ্ঠানগুলোকে বিদয়াত বলা হয়।
“অতঃপর আমি আপনাকে দ্বীনের এক বিধানের” উপর রেখেছি। অতএব আপনি এর অনুসরণ করুন এবং যারা জানেনা তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করবেননা।” (জাসিয়াঃ ১৮)
“নিশ্চয়ই সর্বোত্তম কথা হলো আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম হেদায়াত হলো মুহাম্মাদ (সা:)-এর হেদায়াত। সর্বোৎকৃষ্ট বিষয় হলো মনগড়া নব প্রবর্তিত বিষয়। আর প্রত্যেক নবপ্রবর্তিত বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআতই গুমরাহী বা ভ্রষ্টতা।” (সহীহ মুসলিম)
“তোমাদের উচিত তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অবলম্বন করা এবং এর উপর অটল অবিচল থাকা। যার পন্থা এই যে, আমার আদর্শ অনুসরণ কর কিন্তু কিছুতেই নতুন কিছু উদ্ভাবন করোনা।” (আদ দারিমি)
বিদআতের পরিণতি সম্পর্কে নবী কারীম (সা:) বলেছেনঃ “যে সমাজে একটি বিদআত প্রচলিত হয় সে সমাজ থেকে একটা সুন্নাত উঠে যায়।”
আমাদের সমাজে কিছু অনুষ্ঠান আছে যেগুলো অন্য জাতি থেকে ধার করা বা অন্য কোন জাতির অনুসরণে গড়ে ওঠে এগুলোকে বিজাতীয় সংস্কৃতি বলে। যেমনঃ জন্ম দিন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বিবাহ বার্ষিকী, মা দিবস, বাবা দিবস, বছরের প্রথম দিন উদযাপন ইত্যাদি।
অন্য জাতির অনুসরণ সম্পর্কে নবী কারীম (সা:) বলেছেনঃ “যে জাতি যাদের অনুসরণ করবে, তাদের সাথে সে জাতির হাশর হবে।”
“যে ব্যক্তি বিদআত সৃষ্টি করবে অথবা বিদআতীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সমস্ত মানুষের লা’নত বর্ষিত হবে।” (মুসলিমঃ ১৯৭৮ নং হাদীস)
“যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন ভালো রীতি বা পদ্ধতি চালু করে সে তার প্রতিদান পাবে। এবং তার দেখাদেখি পরবর্তীতে যারা তা করবে তাদের সমান প্রতিদানও সে পাবে। তবে তাদের প্রতিদানে কোন কমতি করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ রীতি-পদ্ধতি চালু করবে তার উপর এর প্রতিফল বর্তাবে। তেমনিভাবে তার দেখাদেখি পরবর্তীতে যারা তা অনুসরণ করবে তাদের সমপরিমাণ প্রতিফলও তার উপর বর্তাবে। তবে তাদের প্রতিফলে কোন কমতি করা হবে না।” (সহীহ মুসলিমঃ ১০২ নং হাদীস)

সাজসজ্জা

আরবীয় লোকেরা গ্রাম্য ও মরু পরিবেশে বসবাস করত। তার দরুন অনেক লোকই পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যের ব্যাপারে তেমন সতর্কতা অবলম্বন করার প্রয়োজন মনে করত না। এ কারণে নবী করীম (সা:) সব সময়ই তাদেরকে পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতার অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করতেন।
এক ব্যক্তি নবী করীম (সা:)-এর খেদমতে হাজির হয়েছিল। তার দাঁড়ি ও চুল অবিন্যস্ত অবস্থায় ছিল। রাসূল (সা:) তার প্রতি এমনভাব ইঙ্গিত করলেন যে, মনে হলো তিনি হয়ত তাকে চুল দাঁড়ি ঠিকঠাক করার নির্দেশ দিচ্ছেন। নবী করীম (সা:) অপর এক ব্যক্তিকে দেখলেন তার চুল এলোমেলো। তিনি বললেনঃ
“ও লোকটি মাথার চুলগুলো ঠিকঠাক করার জন্য কি কিছুই পায়নি? ময়লা কাপড়-চোপড় পড়া অপর একটি লোককে দেখে তিনি বললেন, ও লোক তার কাপড় পরিষ্কার করে ধৌত করার কি কিছু পায়নি? (আবু দাউদ)

স্বর্ণ, রেশমী কাপড় ও হলুদ বর্ণের পোশাক পুরুষদের জন্য হারাম
হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন নবী করীম (সা:) রেশম ডান হাতে নিয়ে এবং স্বর্ণ বাম হাতে নিয়ে বললেনঃ এ দুটি জিনিস আমার উম্মতের পুরুষ লোকদের জন্য হারাম।
হযরত উমর (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি নবী করীম (সা:)কে বলতে শুনেছিঃ
“তোমরা রেশমী কাপড় পরিধান করবে না। কেননা যে লোক দুনিয়ায় রেশমী কাপড় পরিধান করবে, সে পরকালে তা পরতে পারবেনা।” (বুখারী, মুসলিম)
নবী করীম (সা:) এক ব্যক্তির হাতে স্বর্ণের আঙ্গুরীয় দেখতে পেলেন। তখন তিনি সেটিকে টেনে বের করে দূরে নিক্ষেপ করলেন এবং বললেনঃ “তুমি কি নিজ হস্তে আগুনের স্ফূলিঙ্গ ধরে রাখতে চাও?” নবী করীম (সা:) আমাকে হলুদ বর্ণের কাপড় ব্যবহার করতে নিষেধ করছেন। (মুসলিম)

নারীদের সুগন্ধী ব্যবহার করা হারাম
নবী করীম (সা:) বলেছেন, “যে নারীই সুগন্ধি লাগিয়ে ভিন পুরুষদের সান্নিধ্যে যায়, তার সুঘ্রাণ তারা পেয়ে যায়, সে ব্যভিচারিনী এবং তার প্রতি দৃষ্টিই ব্যভিচারী দৃষ্টি হয়ে দাঁড়ায়।” (নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)।

নারীদের চলাফেরা
“মহিলারা যেন তাদের পা এমন জোরে না ফেলে যাতে করে তাদের লুকিয়ে রাখা সৌন্দর্য প্রকাশিত ও গোচরীভূত হয়ে যেতে পারে।” (সূরা নূর : ৩১)

মুসলিম মহিলার পোশাক
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বর্ণনা করেছেন, নবী (সা:) ইরশাদ করেছেনঃ
“দুই ধরনের লোক জাহান্নামী হবে। এক ধরনের লোক সেসব জালিম শাসক প্রশাসক, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মত চাবুক সব সময় ঝুলতে থাকবে এবং যা দিয়ে তারা লোকদের ওপর আঘাত করতে থাকবে। আর দ্বিতীয় হচ্ছে সেসব মেয়েলোক যারা কাপড় পরিধান করেও উলঙ্গ থাকে। তারা পুরুষকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করতে চেষ্টা করবে আর নিজেরাও পুরুষদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে। তাদের মাথা উষ্ট্রের ঝুঁকে পড়া চুটের মতো হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবেনা, তার সুগন্ধিও পাবেনা। যদিও জান্নাতের সুঘ্রাণ বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে।”

নারী-পুরুষের সাদৃশ্য পোশাক হারাম
নবী করীম (সা:) ঘোষণা করেছেন, “নারীর জন্য পুরুষালী পোশাক পরিধান করা এবং পুরুষের জন্য নারীসুলভ পোশাক পরা সম্পূর্ণ হারাম।” (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, নাসায়ী)

খ্যাতি ও অহংকারের পোশাক
পানীয়, খাদ্য ও পরিধেয় সব পবিত্র জিনিসই মুসলমানদের জন্য হালাল। তবে তাতে শর্ত হচ্ছে তা গ্রহণে যেন সীমালংঘন করা না হয় এবং কোনরূপ অহংকার ও গৌরব প্রকাশ না পায়।
“গৌরবে মগ্ন ও অহংকারী কোন ব্যক্তিই আল্লাহ পছন্দ করেন না।” (আল হাদীদঃ ২৩)
নবী করীম (সা:) বলেছেনঃ “যে লোক তার কাপড় অহংকার সহকারে টানবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রতি নজরও দিবেন না।” (বুখারী, মুসলিম)
রাসূলে করীম (সা:) বলেছেনঃ “যে লোক খ্যাতি ও সমৃদ্ধির পোশাক পরিধান করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে লাঞ্ছনা ও অবমাননাকর পোশাক পরিয়ে দেবেন।”

মাত্রাতিরিক্ত সৌন্দর্যের জন্যে আল্লাহ সৃষ্টি বিকৃতিকরণ
সৌন্দর্য বৃদ্ধির চেষ্টায় এমন সব কাজ করা, যার ফলে আল্লাহর সৃষ্টিই বিৃকত হয়ে যায়, ইসলাম আদৌ তা সমর্থন করে না। কোরআনে এ কাজকে শয়তানের অহী বা পরামর্শ বলে অভিহিত করেছেন। কোরআনের ভাষায় :
“আমি আমার অনুসরণকারীদের আদেশ করব। ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকেই বিকৃত করে দেবে।” (সূরা আন নিসা : ১১৯)
নবী করীম (সা:) বলেছেন, “যে মেয়েলোক দেহে উল্কি (সূঁচবিদ্ধ করে চিত্র অংকন) করে, যে তা করায়, যে দাঁত শানিত বানায় এবং যে তা বানাতে বলে, যে স্ত্রীলোক চুল বা পশম উপড়ায় এবং যে অপরের দ্বারা এ কাজ করায়, চুলে যে জোড়া লাগায় এবং যে এ কাজ করায়- রাসূলে করীম (সা:) সবার উপর অভিশাপ করেছেন। (মুসলিম, আবূ দাউদ)

খেজাব লাগানো
যেসব লোক বার্ধক্যে পৌঁছে গেছে, তাদের পক্ষে কালো খেজাব লাগানো বাঞ্ছনীয় নয়। কেননা মক্কা বিজয় কালে হযরত আবু বকর (রা:) তখন তার পিতা আবু কাহাফাকে রাসূলে করীম (সা:) এর কাছে উপস্থিত করালেন, তিনি দেখলেন, তার পিতার চুল একেবারে সাদা হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, “এ চুলের রং পরিবর্তন করে দাও। তবে কালো রং পরিহার কর।” (মুসলিম)
হযরত ইমাম জুহরী বলেনঃ “আমাদের মুখমণ্ডল যখন তরতাজা ছিল নব্যতা ও তারুণ্যপূর্ণ ছিল, তখন আমরা কালো খেজাব ব্যবহার করেছি। কিন্তু যখন আমাদের মুখমণ্ডল ও দাঁতে পরিবর্তন শুরু হয়ে গেল, তখন আমরা তা ত্যাগ করেছি।”

রমযান

“যে লোক এই মাসটি পাবে সে যেন অবশ্যই এই মাসের রোজা পালন করে।” (আল কোরআন)
পবিত্র কোরআনে রোজাকে ‘রমাদান’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যার অর্থ জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে দেয়া। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ‘সুবহে সাদিক’ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যাবতীয় ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকার নামই হচ্ছে রোজা। রোজা থেকে সঠিক ফায়দা হাসিলের জন্য নিন্মোক্ত মাসলাগুলো জানা একান্ত প্রয়োজন।

রমযানের প্রকারভেদ
রোজা ছয় প্রকার
১. ফরজ রোজাঃ রমযান মাসের রোজা।
২. ওয়াজিব রোজাঃ কাফ্ফারা রোজা, মানতের রোজা।
৩. সুন্নাত রোজাঃ আশুরার রোজা; (মহররম মাসের ৯, ১০ তারিখ), আরাফাত দিবস; (জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ,) আইয়ামে বীযের রোজা; চাঁদের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ)

৪. নফল রোজাঃ
– ফরজ ওয়াজিব, সুন্নাত বাদে সব রোজা নফল। যেমন- শাওয়াল মাসে যে কোন ৬ দিন রোজা, শাবান মাসের ১৫ তারিখ রোজা রাখা, সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা, জিলহজ্জ মাসের ১ম ৮ দিন রোজা রাখা।

৫. মাকরুহ রোজা
– শুধুমাত্র শনিবার বা রবিবার রোজা রাখা।
– শুধুমাত্র আশুরার দিন রোজা রাখা।
– স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোজা রাখা।
– মাঝে কোন বিরতি না দিয়ে ক্রমাগত রোজা রাখা।

৬. হারাম রোজাঃ বছরে নিুোক্ত ৫দিন রোজা রাখা হারাম
– ঈদুল ফিতরের দিন রোজা রাখা
– ঈদুল আযহার দিন রোজা রাখা
– ১১, ১২ ও ১৩ই জিলহজ্জ তারিখে রোজা রাখা।

রোজার ফরজঃ রোজার ফরজ ৩টি
১. নিয়ত করা
২. সব ধরণের পানাহার থেকে বিরত থাকা।
৩. ইন্দ্রিয় তৃপ্তি বা যৌন বাসনা পূরণ থেকে বিরত।

রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত
১. মুসলিম হওয়া
২. বালেগ হওয়া
৩. অক্ষম না হওয়া।
৪. মহিলাদের হায়েজ ও নেফাস হতে পবিত্র হওয়া

রোজা ভঙ্গের কারণ 
এর জন্য শুধু কাজা রোজা রাখলেই চলবে।
১. কুলি করার সময় হঠাৎ গলার ভেতর পানি প্রবেশ করলে।
২. বলপূর্বক গলার ভিতর কোন কিছু ঢেলে দিলে।
৩. নাকে অথবা কানে ঔষধ ঢেলে দিলে।
৪. ইচ্ছে করে মুখ ভর্তি বমি করলে।
৫. অখাদ্য, যথা- কাঁকড়, মাটি, কাঠের টুকরো খেয়ে ফেললে।
৬. পায়খানার রাস্তায় বা গুহ্যদ্বারে পিচকারী দিলে।
৭. পেটে বা মস্তিষ্কে ঔষধ লাগানোর ফলে তার তেজ যদি উদর বা মস্তিষ্কে প্রবেশ করে।
৮. নিদ্রাবস্থায় পেটের ভিতর কিছু ঢুকলে।
৯. রাত আছে বা সূর্য ডুবে গেছে মনে করে কিছু খেলে।
১০. মুখে বমি আসার পর পুনরায় তা গিলে ফেললে।
১১. দাঁত থেকে ছোলা পরিমাণ কিছু বের করে তা গিলে ফেললে।

রোজার কাফ্ফারা
রোজার কোন একটি ফরজ ভঙ্গ করলে তার কাফফারা দেওয়া ওয়াজিব হয়।
১. একাধারে ৬১ টি রোজা রাখা (কাফ্ফারা ৬০টিও ভাঙ্গা ১টি)
২. একাধারে রোজা রাখতে অক্ষম হলে ৬০ জন গোলাম আযাদ বা মুক্ত করে দিতে হবে।
যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ
১. এমন রোগে আক্রান্ত যে জীবননাশের আশংকা আছে।
২. হায়েজ, নেফাস ও সন্তান প্রসবকালে।
৩. সন্তান সম্ভবা, প্রসূতি মাতার ও দুগ্ধপোষ্য সন্তানের বিশেষ ক্ষতির আশংকা থাকলে।
৪. কোন বৃদ্ধ শক্তিহীন হলে।
৫. সফরকালে।
এ সমস্ত কারণে রমযান মাসে রোজা না রেখে অন্য সময় তা কাযা আদায় করলেই চলে।

হজ্ব ও কুরবানী

 মানুষের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে আল্লাহর জন্য ঐ ঘরে হজ্জ্ব করা তার উপর কর্তব্য। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)

ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে অন্যতম ভিত্তি হলো হজ্জ্ব। ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয়বসত ুআল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করাই কুরবানী। হজ্জ্ব ও কুরবানীর রয়েছে অশেষ নেকী ও তাৎপর্য। মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ এই ইবাদতগুলো সম্পর্কে সাধারণদের মধ্যে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। তেমনি কিছু প্রশ্নের জবাব নিয়ে এবার ছাত্রী বার্তায় দেয়া হলো হজ্জ্ব ও কুরবানী সম্পর্কিত কিছু মাসলা-মাসায়েল।

হজ্জ্ব ফরয হয় কখন/হজ্জ্ব ফরয হওয়ার

১. মুসলমান হওয়া ২. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া ৩. সুস্থ মসিতষ্ক হওয়া ৪) আযাদ হওয়া ৫. হজ্জ্ব পালনের দৈহিক ও আর্থিক সঙ্গতি থাকা শধ. হজ্জ্বের সময় হওয়া ৬. হজ্জ্ব যাত্রা পথের নিশ্চয়তা শধধধ. বিধর্মী, শত্রু রাষ্ট্রের নও মুসলিমের পক্ষে হজ্জ্ব ফরয হওয়ার জ্ঞান থাকা।

হজ্জ্বের ফরয

হজ্জ্বের ফরয ৩টি যথা- ১. ইহরাম বাঁধা ২. আরাফাতে অবস্থান করা (৯ জিলহজ্জ্ব) ৩. তাওয়াফ।

হজ্জ্বের ওয়াযিবসমূহ

১. মীকাতের আগেই ইহরাম বাঁধা ধধ. সূর্যাসত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান করা

২. সাঈ করা  ধশ. মুযদালিফায় রাত্রি যাপন

৩. মুযদালিফার পর কমপক্ষে দুই রাত্রি মিনায় যাপন করা

৪. কঙ্কর নিক্ষেপ শধধ. হাদী (পশু) যবাই করা

৫. মাথা মুণ্ডানো বা চুল কাটা ধস. বিদায়ী তাওয়াফ

হজ্জ্বের কোন ওয়াজিব যদি ছুটে যায় তাহলে যা করনীয়

যে কোনো কারণেই হোক উপরে বর্ণিত কোন একটি ওয়াজিব ছুটে গেলে দম (অর্থাৎ পশু জবাই) দেয়া ওয়াজিব হয়ে যায়।

মীকাত

পরিমাণ দূরত্বে থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়। ঐ জায়গাগুলোকে মীকাত বলা হয়। সহজে বুঝার জন্য এগুলোকে আমরা মাসজিদুল হারামের সীমান্তএলাকা বলতে পারি।

আরাফার দিনে হাজীদের জন্য আল্লাহর মর্যাদা ও ফযীলত

আরাফার দিনে হাজীদের আল্লাহ অনেক মর্যাদা দান করেছেন।

১.আরাফাতে অবস্থানকারী ও মাশাআরুল হারামবাসীকে আল্লাহ সেদিন ক্ষমা করে দেন। উমর (রাঃ) বলেন, এ ক্ষমা প্রদর্শন কেয়ামত পর্যন্তচালু থাকবে।

২.শয়তান ঐদিন সবচেয়ে বেশি লাঞ্ছিত, হীন ও নিকৃষ্ট বনে যায়।

৩. আল্লাহ সেদিন বলেনঃ এরা কি চায়? অর্থাৎ হাজীরা যা চায় তাই তিনি দিয়ে দেন।

হাদী ও কুরবানির সামর্থ্য ও হাজীদের জন্য হাদী ও কুরবানির হুকুম

হজ্জ্বের জন্য হাজী যে পশু জবাই করে তা হলো হাদী এবং ঈদুল আযহায় যে পশু জবাই হয় সেটি হচ্ছে কুরবানী। অর্থাৎ হাদী হজ্জ্ব উপলক্ষে, আর কুরবানী ঈদ উপলক্ষে। হাদী জবাই ওয়াজিব, কিন্ত্থ্ত্ত্ত্তুকুরবানী করা সুন্নাত।

তাওয়াফের সময়

উত্তম সময় হলো ১০ই যিলহজ্জ্ব ঈদের দিন কংকর নিক্ষেপ। কুরবানী করা ও চুল কাটার পর তাওয়াফ করা। তবে সেদিন ফজর উদয় হওয়ার পরই তাওয়াফের সময় শুরু হয়ে যায়।

মেয়েদের হজ্জ্বে যাবার ক্ষেত্রে মাসআলা

মহিলাদের হজ্জ্ব করার ক্ষেত্রে মাহরাম পুরুষ সাথে থাকতে হবে। এখানে গায়েরে মাহরাম হলে এই নিয়ম পালন হবে না।

শরীয়তে বদলী হজ্জ্ব করার ব্যাপারে  নির্দেশ

শরীয়তে বদলী হজ্জ্বের ব্যাপারে অনুমতি দেয়া আছে। তবে এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে-

– যে ব্যক্তি নিজে হজ্জ্ব করেনি, তার দ্বারা বদলী হজ্জ্ব করানো মাকরুহে তানযিহী অর্থাৎ হারামের কাছাকাছি পর্যায়ের।

উত্তম হচ্ছে যে ব্যক্তি নিজে হজ্জ্ব করেছে এমন ব্যক্তির দ্বারা বদলী হজ্জ্ব করানো।

– শরীয়ত সম্মত কারণ ছাড়া বদলী হজ্জ্ব করানো যাবেনা।

কি কি করণে বদলী হজ্জ্ব করানো যাবে

যে সব কারণে বদলী হজ্জ্ব করানো প্রয়োজন হয়ঃ

১. মৃত্য, ২. বন্দীত্ব, ৩. জীবনে আরোগ্য লাভের আশা নেই এমন পীড়া যেমন পক্ষাঘাত, অন্ধত্ব,৪. খোড়া হয়ে যাওয়া, ৫. এত বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া যাতে বাহনের উপর বসারও ক্ষমতা থাকে না, ৬.. মহিলাদের সাথে মাহরাম না থাকা,৭. পথের নিরাপত্তা না থাকা।

উপরোক্ত ওযরসমূহের আমৃত্য অক্ষমতা থাকা শর্ত। চোখে ছানি পড়া, পা মচকে যাওয়া ইত্যাদি অস্থায়ী বা সাময়িক ওযর বদলী হজ্জ্বের জন্য যথেষ্ট নয়।

 

কুরবানী

কুরবানীর পশুর রক্ত মাংস আল্লাহর কাছে কিছুই পৌছেঁনা- বরঞ্চ তোমাদের পক্ষ থেকে তার কাছে পৌছেঁ  তোমাদের তাক্বওয়া। (সূরা হজ্জ্ব- ৩৭)

কুরবানীর তাৎপর্য ও গুরুত্ব

শরীয়তের পরিভাষায় কুরবানীর অর্থ- আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পশু যবেহ করাকে কুরবানী বলা হয়। এর তাৎপর্য হলো- ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয়বসতআল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা।

কুরবানী আল্লাহর অত্যন্তপছন্দনীয় এক বিশেষ আমল। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বার বার এর ফযীলত সম্পর্কে বলেছেন।

সূরা হাজ্জ্বের ৩৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ

আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি। যাতে আমি তাদেরকে জীবনোপকরণ ¯^iƒc যে সব চতুষ্পদ জীবজন্তু দিয়েছি সেগুলোর উপর তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।

কুরবানীর ফযীলত ও কুরবানী করলে কি পরিমাণ সওয়াব হয়

হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেন- কুরবানীর পশুর প্রতিটি লোমের পরিবর্তে একটি করে নেকী পাবে।

অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকীদের কুরবানী কবুল করেন। (মায়েদা- ২৭)

কুরবানী ওয়াযিব হয় কোন ব্যক্তিদের উপর

যে ব্যক্তিদের উপর কুরবানী ওয়াযিবঃ

– যদি আকিল,বালিগ, মুকীম (মুসাফির নয় এমন ব্যক্তি) ১০ই যিলহজ্জ্ব ফজর হতে ১২ যিলহজ্জ্ব সন্ধ্যা পর্যন্তসময়ের মধ্যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।

– কুরবানী ওয়াযিব হওয়ার জন্য যাকাতের নিসাবের মত সম্পদের এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। বরং যে অবস্থায় সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয় ঐ অবস্থায় কুরবানীও ওয়াজিব হবে।

– মুসাফির ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াযিব নয়।

– কোনো মহিলা নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হলে তার উপর কুরবানী ওয়াযিব।

– কুরবানী ওয়াযিব নয় এমন কোনো ব্যক্তি কুরবানীর নিয়তে পশু খরীদ করলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াযিব হয়ে যায়।

 

কুরবানীর সময়কাল

কুরবানীর সময়কাল হলো যিলহজ্জ্বের ১০ তারিখ হতে ১২ তারিখ সূর্যাসেতর পূর্ব পর্যন্ত।

কুরবানীর গোশত বণ্টনের বিধান

– কুরবানীর গোশত বণ্টনের মুসতাহাব হলো-

তিনভাগ করে একভাগ পরিবার পরিজনের জন্য রাখবে, বাকী দুই ভাগের এক ভাগ AvZ¥xq-¯^Rb, বন্ধু-বান্ধবকে আর এক ভাগ গরীব মিসকীনকে বণ্টন করে দিবে।

– কুরবানীর গোশত কুরবানী দাতার জন্য বিক্রি করা মাকরুহে তাহরিমী। যদি কেউ বিক্রি করে তাহলে এর মূল্য সাদকা করা ওয়াজিব।

– কসাইকে কুরবানীর গোশত মজুরী হিসেবে দেয়া যাবে না।

কুরবানীর চামড়া কি করলে উত্তম

– কুরবানীর চামড়া দান করে দিবে এবং নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। আর বিক্রি করলে তার মূল্য গরীব ও মিসকীনদের দান করতে হবে।

কুরবানী দেয়ার আগে যা আমল করতে  হবে

– কুরবানী দাতার জন্য মুসতাহাব হলো যিলহজ্জ্ব মাসের চাঁদ দেখার পর শরীরের কোনো অংশের চুল ও নখ না কাটা।

মৃত ব্যক্তি যদি কুরবানী করার অসিয়ত করে তাহলে এই ক্ষেত্রে নিয়ম

– যদি পিতার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয় কিন্তুকোন কারণবশত সে কুরবানী করতে না পারে তবে তার পক্ষ হতে কুরবানী করার জন্য সন্তুানদেরকে অসিয়ত করা জরুরী। অসিয়ত করার পর যদি সে মারা যায় তবে তার সম্পদের এক তৃতীয়াংশ মাল হতে কুরবানী করবে।

তথ্যসূত্রঃ

১. জামে আত্‌ তিরমিযী

২. দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম- ইসলামিক ফাউন্ডেশন

৩. হজ্জ্ব ও উমরা- অধ্যাপক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম

৪. এক নজরে হজ্জ্ব- অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

৫. কুরবানীর শিক্ষা- খন্দকার আবুল খায়ের

প্রয়োজনীয় দোয়া-২

খাওয়ার পূর্বের দু

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : আল্লাহ যাকে আহার করালেন সে যেন বলে :

اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَاَطْعِمْنَا خَيْرًا مِنْهُ –

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাদের এই খাদ্যে বরকত দাও এবং এর চেয়ে উত্তম খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করে দাও।

আর আল্লাহ যাকে দুধ পান করালেন সে যেনো বলে :

اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ –

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাদের এই খাদ্যে বরকত দাও এবং এ খাদ্য আরো বেশি করে দাও। (তিরমিযি)

 

খাওয়ার পরের দু

اَللَّهُمَّ لِلَّهِ الَّذِىْ اَطْعَمَنِيْ هَذَا، وَرَزَقَنِيْهِ, مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّيْ وَلاَقُوَّةٍ –

অর্থ: সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে এই পানাহার করালেন এবং এর সামর্থ প্রদান করলেন। যাতে ছিল না আমার পক্ষ থেকে কোন উপায়-উদ্যোগ, ছিল না কোন শক্তি সামর্থ্য। (আবু দাউদ, আহমদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিযি)

সুস্থতার জন্য দুআ

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত। নবী করীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের পরিবারের কোনো রোগীকে দেখতে গেলে তার ওপর ডান হাত বুলাতেন এবং বলতেন :

اَللَّهُمَّ رَبِّ النَّاسِ اَذْهِبِ الْبَاْسَ اِشْفِ اَنْتَ الشَّافِىْ لاَشِفَاءً اِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَيُغَادِرُ سَقَمًا – مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

অর্থ: হে আল্লাহ! হে মানুষের প্রভু! রোগ দূর করুন, আরোগ্য দান করুন, আপনিই আরোগ্য দানকারী, আপনার আরোগ্য ব্যতীত আর কোন আরোগ্য কার্যকর নয়, এমন আরোগ্য যা কোনো রোগকে অবশিষ্ট রাখে না। (বুখারি ও মুসলিম)

নতুন কাপড় পরিধানের দু

اَللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ كَسَوْتَنِيْهِ اَسْاَلُكَ مِنْ خَيْرِهِ وَخَيْرِ مَاصُنِعَ لَهُ، وَاَعُوْذُبِِكَ مِنْ شَرِّهُ وَشَرِّ مَاصُنِعَ لَهُ –

অর্থ : হে আল্লাহ! তোমারই জন্য সকল প্রশংসা। তুমিই এ কাপড় আমাকে পরিয়েছো। আমি তোমার কাছে এর মধ্যে নিহিত কল্যাণ ও এটি যে জন্য তৈরি করা হয়েছে সেসব কল্যাণ প্রার্থনা করি। আমি এর অনিষ্ট এবং এটি তৈরির অনিষ্ট থেকে তোমার আশ্রয় কামনা করি। (আবু দাউদ, তিরমিযি)

নতুন চাঁদ দেখে পড়ার দুআ

وَالسَّلاَمَةِ وَالاِسْلاَمِ، وَالتَّوْفِيْقِ لِمَا تُحِبُّ وَتَرْضي، رَبُّنَا وَرَبُّكَ اللهُ

অর্থ: আল্লাহ মহান! আয় আল্লাহ! এ নতুন চাঁদকে আমাদের জন্য নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের চাঁদ হিসেবে উপস্থাপন করো। যা তুমি ভালোবাস ও যাতে তুমি সন্তুষ্ট এ মাসে আমাদেরকে তা করার তাওফীক দাও। (হে চাঁদ) আমাদের প্রতিপালক ও তোমার প্রতিপালক একই আল্লাহ। (তিরমিযি, দারেমী) 

তারাবীহ নামাযের প্রয়োজনীয় দোয়া : চার রাকআত পড়ার পর পড়তে হয়

سُبْحَانَ ذِى الْمُلْكِ وَلْمَلَكُوْتِ سُبْحَانَ ذِى الْعِزَّةِ وَالْعَظَمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَىِّ الَّذِىْ لاَيَنَامُ وَلاَيَمُوْتُ اَبَدًا سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنَا وَرَبُّ الْمَلئِكَةِ وَالرُّوْحِ-

উচ্চারণ : সুবহানাজিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানাজিল ইযযাতি, ওয়াল আযমাতি, ওয়াল হায়বাতি, ওয়াল কুদরাতি, ওয়াল কিবরিয়ায়ি, ওয়াল যাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়ীল্লাজি-লা-ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু, আবাদান আবাদা, সুব্বুহুন, কুদ্দুসুন, রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়াররুহ।

অর্থ: আমি তাঁরই পবিত্রতা বর্ণনা করছি, যিনি বাদশাহ ও ফিরিশতাদের কর্তা। আমি তাঁরই পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি মানব সম্ভ্রমের কর্তা এবং মহিয়ান। ভয়দাতা, শক্তিশালী গৌরবান্বিত, বৃহত্তম। আমি সেই চির জীবন্ত বাদশাহর পবিত্রতা প্রচার করছি, যিনি বিশ্রাম গ্রহণ করেন না। এমন যিনি পুতঃপবিত্র, তিনিই আমাদের প্রতিপালক এবং ফেরেশতা ও আত্মাগুলোর পালনকর্তা।

তাহাজ্জুদ সালাতে উঠে দুআ

আবু দাউদে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রাতে ঘুম থেকে জাগতেন, তখন বলতেন :

অর্থ: তুমি ছাড়া কোনো হুকুমকর্তা ও মুক্তিদাতা প্রভু নেই। সকল প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি ও দূর্বলতা থেকে মুক্ত পবিত্র তুমি। আমি তোমারই প্রশংসা করি হে আল্লাহ! আমার অপরাধের জন্যে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই। আমি তোমার অনুগ্রহ চাই। আয় আল্লাহ, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দাও। সঠিক পথ দেখাবার পর আমার অন্তরকে আর বিপথগামী করো না। তোমার অনুগ্রহ আমাকে দান করো। অবশ্যই তুমি অতিশয়
মহান দাতা।

প্রতিদিন প্রতিক্ষণ আল্লাহকে স্মরণ

رَبِّ زِدْنِىْ عِلْمًا

অর্থ : হে আমার রব! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দাও। (সূরা তাহা : ১১৪)

ইসতিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা করার সর্বশ্রেষ্ঠ দুআ)

اَسْتَغْفِرُاللَهَ الْعَظِيْمِ الَّذِىْ لَا اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَاَتُوْبُ اِلَيْهِ ”

অর্থ : (আমি মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি যে চিরঞ্জীব চিরস্থায়ী সত্তা ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং আমি তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তন করছি।

দুনিয়া আখেরাতের কল্যাণের জন্য দুআ

رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ”

অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমাদিগকে ইহকালে কল্যাণ দান কর এবং পরকালেও কল্যাণ (দান কর) এবং আমাদিগকে দোযখের শাস্তি থেকে রক্ষা কর। (সূরা বাকারাহ : ২০১)

হেদায়েত লাভের দুআ

اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى ”

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট হেদায়েত, পরহেযগারিতা, ক্ষমা ও অমুখাপেক্ষিতা প্রার্থনা করছি। (তিরমিযী ৩৪৮৯, ইবনে মাজাহ ৩৮৩২)

 

রব্বানা লা তুযিগ্‌ ক্বুলুবানা বা’দা ইয হাদাইতানা ওয়াহাব্‌ লানা মিল্লাদুংকা রাহ্‌মাতান ইন্নাকা আংতাল ওয়াহ্‌হাব।

(সূরা আলে ইমরান ঃ ৮)

 

“প্রভু হে, একবার যখন দয়া করে হেদায়াত দান করেছে। অতএব আর কখনও আমাদের দিলকে বাঁকা পথে যেতে দিও না তোমার পথ থেকে। আমাদের উপর রহমত বর্ষণ কর। তুমি অবশ্যই মহান দাতা।” (সূরা আলে ইমরান ঃ ৮)

ফাতিরস্‌সামা ওয়াতি ওয়াল আরদি আংতা ওয়ালিইয়্যি ফিদ্দুনয়া ওয়াল আখিরাতি। তাওয়াফ্‌ফানি মুসলিমাও ওয়াল্‌ হিক্বনি বিস্‌সালিহীন। (সূরা  ইউসুফ ঃ ১০১)

 

‘‘হে আসমান-জমীন তথা গোটা বিশ্বপ্রকৃতির স্রষ্টা, তুমি আমার ইহকালেরও প্রভু, পরকালেরও প্রভু। তুমি আমাকে নেক বান্দাদের মধ্যে আমাকে শামিল কর।” (সূরা ইউসুফ ঃ ১০১)

 

 কুরআন তিলাওয়াত শেষে দুআ

 

اللَّهُمَّ ارزُقْنِىْ التَّفَكُّرُ وَالتَّدَبُّرَ بِمَا يَتْلُوْهُ لِسَانِىْ مِنْ كِتَابِكَ ، وَالْفَهْمَ لَهُ، وَالْمَعرِفَةَ بِمَعَانِيْهِ ، وَالنَّظرَ فِىْ غَجَآئِبِهِ ، وَالْعَمَلَ بِذٰلِك مَا بَقِيْتُ اِنَّكَ علىٰ كلِّى شَيءٍ قديرٌ ”

অর্থ: হে আল্লাহ! আমার যবান তোমার কিতাবের যে অংশ পাঠ করে, তাতে চিন্তা ও গবেষণা করার তাওফীক দাও। আমাকে তা বোঝার ও হৃদয়ঙ্গম করার শক্তি দাও। তার রহস্যগুলো অবলোকন করার এবং আমার বাকি জীবন তার ওপর আমল করার তাওফীক দাও। নিশ্চয়ই তুমি সকল বস্তুর ওপর ক্ষমতাবান।

 

اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْهَرَمِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لَا يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لَا يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لَا تَشْبَعُ وَمِنْ دَعْوَةٍ لَا يُسْتَجَابُ لَهَا ”

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাচ্ছি তোমার কাছে অক্ষমতা ও আলস্য থেকে, কার্পণ্য ও বার্ধক্য থেকে এবং কবরের আযাব থেকে। হে আল্লাহ! আমার নফসকে তাকওয়া দান কর এবং তাকে পাক করে দাও। তুমি সবচাইতে পাকপবিত্রকারী। তুমি তার অভিভাবক ও মালিক। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই অনুপকারী ইলম থেকে, আল্লাহর ভয়শূন্য হৃদয় থেকে, অতৃপ্ত নফস থেকে এবং এমন দু’আ থেকে যা কবুল হয় না।

 

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ حُبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يُحِبُّكَ وَالْعَمَلَ الَّذِي يُبَلِّغُنِي حُبَّكَ ، اللَّهُمَّ اجْعَلْ حُبَّكَ أَحَبَّ إِلَيَّ مِنَ الْمَاءِ الْبَارِدِ ”

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার ভালবাসা প্রার্থনা করছি এবং সেই ব্যক্তির ভালবাসা প্রার্থনা করছি, যে তোমাকে ভালবাসে, আর এমন “আমল প্রার্থনা করছি, যা আমাকে তোমার ভালবাসার কাছে পৌঁছিয়ে দেবে। হে আল্লাহ! তোমার ভালবাসাকে আমার কাছে আমার প্রাণ, আমার পরিবার-পরিজন ও ঠাণ্ডা পানির চাইতে বেশি প্রিয় করো।

 

وعَنْ أَنَسٍ رَضي اللَّه عنْهُ قَالَ كانَ أَكْثَرُ دُعَاءِ النبيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : اَللَّهُمَّ آتِنَا في الدُّنْيَا حَسَنَةً ، وفي الآخِرةِ حَسنَةً ، وَقِنَا عَذابَ النَّارِ গ্ধ مُتَّفَقٌ عليهِ ” زَادَ مُسْلِمُ فِىْ رِوَايَتِه قَالَ وَكَانَ أَنَسٌ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَدْعُوَ بِدَعْوَةٍ دَعَا بِهَا ، فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَدْعُوَ بِدُعَاءٍ دَعَا بِهَا فِيهِ ”

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় এই দু’আ করতেন : “হে আল্লাহ! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ ও আখিরাতে কল্যাণ দান কর এবং জাহান্নামের আযাব থেকে আমাকে বাঁচাও” ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুসলিমের বর্ণনাতে আরো আছে : হযরত আনাস (রা.) যখন কোন দু’আ করতে চাইতেন তখন এই দু’আটিই করতেন এবং যখন অন্য কোন দু’আ করতে চাইতেন তখন এ দু’আটিও তার মধ্যে শামিল করতেন।

 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ:  اللَّهُمَّ اَصْلِحْ لِىْ دِيْنِ الَّذِىْ هُوَ عَصِمَةُ أمري، اَصْلِحْ لِىْ دُنْيَايَ الَّتِيْ فِيْهَا مَعَاشْيْ، اَصْلِحْ لِىْ آخِرَتِيْ الَّتْيْ فِيْهَا مَعَادِيْ، وَاجْعَلِ الْحَيَاةَ زِيَادَةً لِيْ فِيْ كُلِّ خَيْرٍ، وَاجْعَلِ الْمَوْتَ رَاحَةً لِيْ مِنْ كُلَّ شَرٍّ – رَوَاهُ مُسْلِمٌ ”

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করতেন : “হে আল্লাহ! আমার দীনকে আমার জন্য সংশোধন করে দাও, যা আমার কাজের সংরক্ষক, আমার দুনিয়াকে আমার জন্য সংশোধন করে দাও, যার মধ্যে রয়েছে আমার জীবন-জীবিকা, আমার আখিরাতকে আমার জন্য সুশোভন করে দাও যেখানে আমাকে ফিরে যেতে হবে। প্রত্যেক নেক কাজে আমার হায়াত বাড়িয়ে দাও এবং প্রত্যেক খারাপ কাজ থেকে মৃত্যুকে আমার জন্য আরামের কারণে পরিণত কর।”

ধৈর্যধারণের দোয়া:

রব্বানা আফ্‌রিগ্‌ আলাইনা সব্‌রাওওয়া সাব্বিত আক্বদামানা ওয়ান্‌সুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।

(সূরা আল বাকারা ঃ ২৫০)

“হে আমাদের প্রভু, আমাদেরকে ধৈর্যধারণের ক্ষমতা দাও। আমাদের কদমকে সুদৃঢ় কর এবং কাফেরদের উপর বিজয় দান কর।”   -(সূরা আল বাকারা ঃ ২৫০)

 

কাফেরদের উপর বিজয় দান করার দোয়া:

 

রব্বানা লা তুয়াখিয্‌না ইন্নাসিনা আও আখ্‌তনা রব্বানা ওয়ালা তাহ্‌মিল আলাইনা ইস্‌রান কামা হামাল্‌তাহূ আলাল্লাযিনা মিং ক্বাব্‌লিনা রব্বানা ওয়ালা তুহাম্‌মিল্‌না মা লা ত্বক্বাতা লানা বিহি, ওয়া’ফু আন্না, ওয়াগ্‌ফিরলানা ওয়ার্‌হাম্‌না আন্‌তা মাওলানা ফাংসুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন। -(সূরা আল বাকারা ঃ ২৮৬)

 

‘‘হে আমাদের রব, আমরা যদি ভুল করে থাকি বা ছোটখাট ত্রুটি করে থাকি তাহলে তুমি সেগুলোর ব্যাপারে আমাদেরকে পাকড়াও করো না। আমাদের উপর সেই রূপ কঠিন বোঝা (পরীক্ষা বা আযাব) চাপিয়ো না যেরূপ বোঝা চাপিয়েছ আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। আর তেমন বোঝাও চাপিও না যেমনটি বহনের শক্তি আমাদের নেই। তুমি আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি মার্জনা কর। অপরাধ ক্ষমা কর। আমাদের উপর রহম কর। তুমি আমাদের প্রভু। অতএব আমাদেরকে কাফেরদের উপর বিজয় দান কার।” -(সূরা আল বাকারা ঃ ২৮৬)

 

গোনাহ মাফের দোয়া:

রব্বানাগ্‌ফিরলানা যুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আম্‌রিনা ওয়াসাব্বিত রব্বানা আক্‌দামানা ওয়ান্‌সুর্‌না আলাল্‌ ক্বাওমিল কাফিরিন। (সূরা আলে ইমরান ঃ ১৪৭)

“হে আমাদের রব আমাদের গোনাহ মাফ কর এবং আমাদের কাজে কোন বাড়াবাড়ী হয়ে থাকলে তাও ক্ষমা কর। আমাদের কদমকে মজবুত কর। আর কাফেরদের উপর বিজয় দান কর।” (সূরা আলে ইমরান ঃ ১৪৭)

রব্বানা মা খালাক্বতা হাযা বাতিলান, সুব্‌হানাকা ফাক্বিনা আযাবান্নার, রব্বানা ইন্নাকা মান্‌ তুদখিলিন্নার, ফাক্বাদ আখ্‌যাইতাহু। ওয়ামা লিয়্‌যালিমিনা মিন আংসার রব্বানা ইন্নানা সামি’না মুনাদিয়াইয়ুনাদি লিল্‌ইমানি আন্‌ আমিনু বিরাব্বিকুম ফাআমান্না, রব্বানা ফাগ্‌ফিরলানা যুনুবানা ওয়াকাফ্‌ফির আন্না সাইয়ি আতিনা ওয়াতাওয়অফ্‌ফানা মায়্যল আব্‌রার, রব্বানা ওয়া আতিনা মা ওয়াদ্‌তানা আলা রসুলিকা ওয়ালা তুখযিনা ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ ইন্নাকা লা তুখ্‌লিফুল মি আদ।

(সূরা আলে ইমরান ঃ১৯১-১৯৪)

“হে আমাদের রব, তুমি এ সৃষ্টিজগতের কোন কিছুই অর্থহীনভাবে সৃষ্টি করনি। তুমি পুতঃপবিত্র। অতএব আমাদের দোযখের আগুন থেকে নাজাত দাও। হে প্রভু, তুমি যাদেরকে দোযখের আগুন থেকে নাজাত দাও। হে প্রভু, তুমি যাদেরকে দোযখে ঢুকাবে তাকে অবশ্য অবশ্যই লাঞ্ছিত করে ছাড়বে। আর কোন জালেমের জন্য সেদিন কোন সাহায্যকারী থাকবে না। হে প্রভু, আমরা একজন আহ্বানকারীকে এই মর্মে আহ্বান করতে শুনেছি, ‘ তোমাদের রবের পথে ঈমান আন।’ অতপর আমরা ঈমান এনেছি। অতএব, হে আমাদের রব, তুমি আমাদের গোনাহ মাফ কর। ত্রুটি-বিচ্যুতি মার্জনা কর। আর আমাদেরকে তোমার নেক বান্দাদের সাথে থাকার তৌফিক দিও। হে প্রভু, তুমি তোমার রাসূলের মাধ্যমে আমাদেরকে যা কিছু দেবার ওয়াদা করেছ তা দাও। কিয়ামতের সেই দিনে আমাদের লাঞ্ছিত কর না। তুমি তো কখনই ওয়াদা খেলাপ কর না।”

(সূরা আলে ইমরান ঃ ১৯১-১৯৪)

রব্বানা যলাম্‌না আংফুসানা ওয়াইল্লাম তাগ্‌ফিরলানা ওয়াতার্‌হাম্‌না লানাকুনান্না মিনাল খসিরিন। (সূরা আল আরাফ ঃ ২৩)

“হে আমাদের রব! আমরা তো আমাদের নফসের উপর জুলুম করেছি। তুমি যদি ক্ষমা না কর, রহমত না কর, তাহলে তো আমরা অবশ্য অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব।” (সূরা আল আরাফ ঃ ২৩)

রব্বানাগ্‌ফির্‌ লানা ওয়ালিইখ্‌ওয়ানিনা আল্লাযিনা সাবাক্বুনা বিল্‌ঈমানি ওয়ালা তাজ্‌আল ফি কুলুবিনা গিল্লাললিল্লাযিনা আমানু রব্বানা ইন্নাকা রউফুর রাহীম। (সূরা আল হাশরঃ ১০)

“হে আমাদের পরোয়ারদেগার, আমাদেরকে ক্ষমা কর আর আমাদের ঐ সকল ভাইদেরকে ক্ষমা কর যারা ঈমানের ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে অগ্রগামী। আমাদের মনে কোন ঈমানদারের জন্যে কোন প্রকারের সংকীর্ণতা ও ঈর্ষাপরায়ণতার ভাব সৃষ্টি হতে দিও না। তুমি তো অতীব দয়ালু এবং মেহেরবান।” (সূরা আল হাশর ঃ ১০)

 

রব্ব্‌িজ আল্‌নি মুক্বিমাস্‌ সলাতি ওয়া মিন যুররিয়্যাতি রব্বানা ওয়াতাক্বাবাল দুআ। (সূরা ইবরাহীম ঃ৪০)

“হে আমার মুনীব ! আমাকে, আমার সন্তানদেরকে সালাত কায়েমকারী বানাও। হে পরোয়ারদেগার আমার দোয়া কবুল কর।” (সূরা ইবরাহীম ঃ ৪০)

 

রব্বানাগ্‌ফিরলি ওয়ালি ওয়ালি দাইয়া ওয়ালিল্‌ মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব্‌ -(সূরা ইব্‌রাহীম ঃ ৪১)

“হে আমাদের পরোয়ারদেগার, আমাকে, আমার মা-বাপকে ও সমস্ত মুসলিমদেরকে সেই দিনে রক্ষা কর, যেদিন আমাদের সবার হিসেব হবে।”  (সূরা ইবরাহীম ঃ ৪১)

বাবা-মার জন্য দোয়া:

রব্বির্‌ হামহুমা কামা রব্বা ইয়ানি সগিরা। (বনি ইসরাঈল ২৪)

“হে পরোয়ারদেগার, আমাদের মা-বাপের প্রতি তেমনি দয়া কর, যেমন দয়া মায়া সহ তারা আমাদেরকে ছোটবেলায় লালন-পালন করেছেন।”  (বনি ইসরাঈল ঃ ২৪)

 

রব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা ক্বুররাতা আ’য়ুনিন, ওয়াজ্‌আলনা লিল্‌মুত্তাক্বিনা ইমামা।

(সূরা আল ফুরকান ঃ৭৪)

“হে আমাদের রব, আমাদেরকে এমন জীবন সাথী এবং সন্তান দাও যাতে আমাদের চক্ষু শীতল হয়। আর আমাদের সবাইকে মুত্তাকীদের জন্য অনুসরণযোগ্য আদর্শ রূপে গড়ে উঠার তৌফিক দাও।” -(সূরা আল ফুরকান ঃ ৭৪)

 

পায়খানা থেকে বের হওয়ার দোয়া:

غُفْرَانَكَ».

বাংলা উচ্চারণ : গুফরা-নাকা

বাংলা অর্থ : “আমি আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।” [আবূ দাউদ, নং ৩০; তিরমিযী, নং ৭; ইবন মাজাহ্‌, নং ৩০০।

 

পায়খানায় প্রবেশ করার দোয়া:

বাংলা উচ্চারণ : [বিসমিল্লাহি] আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল খুব্‌সি ওয়াল খাবা-ইসি।

বাংলা অর্থ : “[আল্লাহ্‌র নামে।] হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অপবিত্র নর জিন্ ও নারী জিন্ থেকে আশ্রয় চাই”। [বুখারী ১/৪৫, নং ১৪২; মুসলিম ১/২৮৩, নং ৩৭৫।