হজ্ব ও কুরবানী

 মানুষের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে আল্লাহর জন্য ঐ ঘরে হজ্জ্ব করা তার উপর কর্তব্য। (সূরা আলে ইমরান- ৯৭)

ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির মধ্যে অন্যতম ভিত্তি হলো হজ্জ্ব। ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয়বসত ুআল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করাই কুরবানী। হজ্জ্ব ও কুরবানীর রয়েছে অশেষ নেকী ও তাৎপর্য। মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ এই ইবাদতগুলো সম্পর্কে সাধারণদের মধ্যে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। তেমনি কিছু প্রশ্নের জবাব নিয়ে এবার ছাত্রী বার্তায় দেয়া হলো হজ্জ্ব ও কুরবানী সম্পর্কিত কিছু মাসলা-মাসায়েল।

হজ্জ্ব ফরয হয় কখন/হজ্জ্ব ফরয হওয়ার

১. মুসলমান হওয়া ২. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া ৩. সুস্থ মসিতষ্ক হওয়া ৪) আযাদ হওয়া ৫. হজ্জ্ব পালনের দৈহিক ও আর্থিক সঙ্গতি থাকা শধ. হজ্জ্বের সময় হওয়া ৬. হজ্জ্ব যাত্রা পথের নিশ্চয়তা শধধধ. বিধর্মী, শত্রু রাষ্ট্রের নও মুসলিমের পক্ষে হজ্জ্ব ফরয হওয়ার জ্ঞান থাকা।

হজ্জ্বের ফরয

হজ্জ্বের ফরয ৩টি যথা- ১. ইহরাম বাঁধা ২. আরাফাতে অবস্থান করা (৯ জিলহজ্জ্ব) ৩. তাওয়াফ।

হজ্জ্বের ওয়াযিবসমূহ

১. মীকাতের আগেই ইহরাম বাঁধা ধধ. সূর্যাসত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান করা

২. সাঈ করা  ধশ. মুযদালিফায় রাত্রি যাপন

৩. মুযদালিফার পর কমপক্ষে দুই রাত্রি মিনায় যাপন করা

৪. কঙ্কর নিক্ষেপ শধধ. হাদী (পশু) যবাই করা

৫. মাথা মুণ্ডানো বা চুল কাটা ধস. বিদায়ী তাওয়াফ

হজ্জ্বের কোন ওয়াজিব যদি ছুটে যায় তাহলে যা করনীয়

যে কোনো কারণেই হোক উপরে বর্ণিত কোন একটি ওয়াজিব ছুটে গেলে দম (অর্থাৎ পশু জবাই) দেয়া ওয়াজিব হয়ে যায়।

মীকাত

পরিমাণ দূরত্বে থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়। ঐ জায়গাগুলোকে মীকাত বলা হয়। সহজে বুঝার জন্য এগুলোকে আমরা মাসজিদুল হারামের সীমান্তএলাকা বলতে পারি।

আরাফার দিনে হাজীদের জন্য আল্লাহর মর্যাদা ও ফযীলত

আরাফার দিনে হাজীদের আল্লাহ অনেক মর্যাদা দান করেছেন।

১.আরাফাতে অবস্থানকারী ও মাশাআরুল হারামবাসীকে আল্লাহ সেদিন ক্ষমা করে দেন। উমর (রাঃ) বলেন, এ ক্ষমা প্রদর্শন কেয়ামত পর্যন্তচালু থাকবে।

২.শয়তান ঐদিন সবচেয়ে বেশি লাঞ্ছিত, হীন ও নিকৃষ্ট বনে যায়।

৩. আল্লাহ সেদিন বলেনঃ এরা কি চায়? অর্থাৎ হাজীরা যা চায় তাই তিনি দিয়ে দেন।

হাদী ও কুরবানির সামর্থ্য ও হাজীদের জন্য হাদী ও কুরবানির হুকুম

হজ্জ্বের জন্য হাজী যে পশু জবাই করে তা হলো হাদী এবং ঈদুল আযহায় যে পশু জবাই হয় সেটি হচ্ছে কুরবানী। অর্থাৎ হাদী হজ্জ্ব উপলক্ষে, আর কুরবানী ঈদ উপলক্ষে। হাদী জবাই ওয়াজিব, কিন্ত্থ্ত্ত্ত্তুকুরবানী করা সুন্নাত।

তাওয়াফের সময়

উত্তম সময় হলো ১০ই যিলহজ্জ্ব ঈদের দিন কংকর নিক্ষেপ। কুরবানী করা ও চুল কাটার পর তাওয়াফ করা। তবে সেদিন ফজর উদয় হওয়ার পরই তাওয়াফের সময় শুরু হয়ে যায়।

মেয়েদের হজ্জ্বে যাবার ক্ষেত্রে মাসআলা

মহিলাদের হজ্জ্ব করার ক্ষেত্রে মাহরাম পুরুষ সাথে থাকতে হবে। এখানে গায়েরে মাহরাম হলে এই নিয়ম পালন হবে না।

শরীয়তে বদলী হজ্জ্ব করার ব্যাপারে  নির্দেশ

শরীয়তে বদলী হজ্জ্বের ব্যাপারে অনুমতি দেয়া আছে। তবে এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে-

– যে ব্যক্তি নিজে হজ্জ্ব করেনি, তার দ্বারা বদলী হজ্জ্ব করানো মাকরুহে তানযিহী অর্থাৎ হারামের কাছাকাছি পর্যায়ের।

উত্তম হচ্ছে যে ব্যক্তি নিজে হজ্জ্ব করেছে এমন ব্যক্তির দ্বারা বদলী হজ্জ্ব করানো।

– শরীয়ত সম্মত কারণ ছাড়া বদলী হজ্জ্ব করানো যাবেনা।

কি কি করণে বদলী হজ্জ্ব করানো যাবে

যে সব কারণে বদলী হজ্জ্ব করানো প্রয়োজন হয়ঃ

১. মৃত্য, ২. বন্দীত্ব, ৩. জীবনে আরোগ্য লাভের আশা নেই এমন পীড়া যেমন পক্ষাঘাত, অন্ধত্ব,৪. খোড়া হয়ে যাওয়া, ৫. এত বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া যাতে বাহনের উপর বসারও ক্ষমতা থাকে না, ৬.. মহিলাদের সাথে মাহরাম না থাকা,৭. পথের নিরাপত্তা না থাকা।

উপরোক্ত ওযরসমূহের আমৃত্য অক্ষমতা থাকা শর্ত। চোখে ছানি পড়া, পা মচকে যাওয়া ইত্যাদি অস্থায়ী বা সাময়িক ওযর বদলী হজ্জ্বের জন্য যথেষ্ট নয়।

 

কুরবানী

কুরবানীর পশুর রক্ত মাংস আল্লাহর কাছে কিছুই পৌছেঁনা- বরঞ্চ তোমাদের পক্ষ থেকে তার কাছে পৌছেঁ  তোমাদের তাক্বওয়া। (সূরা হজ্জ্ব- ৩৭)

কুরবানীর তাৎপর্য ও গুরুত্ব

শরীয়তের পরিভাষায় কুরবানীর অর্থ- আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পশু যবেহ করাকে কুরবানী বলা হয়। এর তাৎপর্য হলো- ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয়বসতআল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা।

কুরবানী আল্লাহর অত্যন্তপছন্দনীয় এক বিশেষ আমল। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বার বার এর ফযীলত সম্পর্কে বলেছেন।

সূরা হাজ্জ্বের ৩৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ

আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি। যাতে আমি তাদেরকে জীবনোপকরণ ¯^iƒc যে সব চতুষ্পদ জীবজন্তু দিয়েছি সেগুলোর উপর তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।

কুরবানীর ফযীলত ও কুরবানী করলে কি পরিমাণ সওয়াব হয়

হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেন- কুরবানীর পশুর প্রতিটি লোমের পরিবর্তে একটি করে নেকী পাবে।

অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকীদের কুরবানী কবুল করেন। (মায়েদা- ২৭)

কুরবানী ওয়াযিব হয় কোন ব্যক্তিদের উপর

যে ব্যক্তিদের উপর কুরবানী ওয়াযিবঃ

– যদি আকিল,বালিগ, মুকীম (মুসাফির নয় এমন ব্যক্তি) ১০ই যিলহজ্জ্ব ফজর হতে ১২ যিলহজ্জ্ব সন্ধ্যা পর্যন্তসময়ের মধ্যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।

– কুরবানী ওয়াযিব হওয়ার জন্য যাকাতের নিসাবের মত সম্পদের এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। বরং যে অবস্থায় সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয় ঐ অবস্থায় কুরবানীও ওয়াজিব হবে।

– মুসাফির ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াযিব নয়।

– কোনো মহিলা নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হলে তার উপর কুরবানী ওয়াযিব।

– কুরবানী ওয়াযিব নয় এমন কোনো ব্যক্তি কুরবানীর নিয়তে পশু খরীদ করলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াযিব হয়ে যায়।

 

কুরবানীর সময়কাল

কুরবানীর সময়কাল হলো যিলহজ্জ্বের ১০ তারিখ হতে ১২ তারিখ সূর্যাসেতর পূর্ব পর্যন্ত।

কুরবানীর গোশত বণ্টনের বিধান

– কুরবানীর গোশত বণ্টনের মুসতাহাব হলো-

তিনভাগ করে একভাগ পরিবার পরিজনের জন্য রাখবে, বাকী দুই ভাগের এক ভাগ AvZ¥xq-¯^Rb, বন্ধু-বান্ধবকে আর এক ভাগ গরীব মিসকীনকে বণ্টন করে দিবে।

– কুরবানীর গোশত কুরবানী দাতার জন্য বিক্রি করা মাকরুহে তাহরিমী। যদি কেউ বিক্রি করে তাহলে এর মূল্য সাদকা করা ওয়াজিব।

– কসাইকে কুরবানীর গোশত মজুরী হিসেবে দেয়া যাবে না।

কুরবানীর চামড়া কি করলে উত্তম

– কুরবানীর চামড়া দান করে দিবে এবং নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। আর বিক্রি করলে তার মূল্য গরীব ও মিসকীনদের দান করতে হবে।

কুরবানী দেয়ার আগে যা আমল করতে  হবে

– কুরবানী দাতার জন্য মুসতাহাব হলো যিলহজ্জ্ব মাসের চাঁদ দেখার পর শরীরের কোনো অংশের চুল ও নখ না কাটা।

মৃত ব্যক্তি যদি কুরবানী করার অসিয়ত করে তাহলে এই ক্ষেত্রে নিয়ম

– যদি পিতার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয় কিন্তুকোন কারণবশত সে কুরবানী করতে না পারে তবে তার পক্ষ হতে কুরবানী করার জন্য সন্তুানদেরকে অসিয়ত করা জরুরী। অসিয়ত করার পর যদি সে মারা যায় তবে তার সম্পদের এক তৃতীয়াংশ মাল হতে কুরবানী করবে।

তথ্যসূত্রঃ

১. জামে আত্‌ তিরমিযী

২. দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম- ইসলামিক ফাউন্ডেশন

৩. হজ্জ্ব ও উমরা- অধ্যাপক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম

৪. এক নজরে হজ্জ্ব- অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

৫. কুরবানীর শিক্ষা- খন্দকার আবুল খায়ের

×

Comments are closed.