সিয়াম সাধনায় আল্লাহর রাসূল (সা:)
‘রমযান সেই মাস, যে মাসে মানবজাতি পথ প্রদর্শন, পথ প্রদর্শনের উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ এবং ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যকারী কুরআন নাযিল করা হয়েছে। অতএব যে ব্যক্তি এ মাসটি পেল সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে।‘ (সূরা আল বাকারা : ১৮৫)
রমযানুল মুবারক, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অসীম রহমতের সাগরে দুনিয়াতে প্রকাশপ্রাপ্ত সবচেয়ে বড় জলোচ্ছাস যেন। কুরআন নাযিলের ঘটনা এবং সেই সাথে আল্লাহর রহমত, বরকত, মাগফেরাতের ভান্ডার থেকে সবকিছু অর্জনের সর্বোত্তম সুযোগ এই মাসকে করেছে মহিমান্বিত। এই সর্বোত্তম মাসটিকে সর্বোত্তমভাবে পালনের জন্য আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে আছেন মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সা.); যার ব্যাপারে কুরআনের ভাষ্য ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর জীবনে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।‘ (সূরা আহযাব : ২১)
অতএব, রাসূল (সা.)-এর রমজান পালনের দিকগুলো সামনে রেখে, সেভাবেই যদি আমরা এই পবিত্র মাস উদযাপন করতে পারি, তবেই এই সর্বোত্তম মাসটি থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ নেকী অর্জন সম্ভব।
রাসূল (সা.) এর জীবনাচরণ বিশ্লেষণ করলে, আমরা দেখব, রমযানের পূর্বকালীন সময় থেকে রমজানের সর্বোত্তম পবিত্রতা রক্ষা করে রাসূলে পাক (সা.) এ সময়ে প্রতিটি মুহ‚র্তকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রয়াসে কিভাবে ব্যয় করেছেন।
রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি
রমজান মাসের পূর্ব থেকেই রাসূল (সা.) এই মাসকে বিশেষভাবে পালনের জন্য কিছু পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। যেমনÑ রমজানের পূর্বে শা’বান মাসেই রাসূল (সা.)-এর ইবাদত বেড়ে যেত। শা’বান মাসের প্রায় পুরোটাই তিনি রোজা রাখতেন। তবে রমজানের এক বা দু’দিন আগে রোজা রাখতেন না। এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা কেউ রমজানের একদিন কিংবা দু’দিন আগে হতে সাওম শুরু করবে না। তবে কেউ যদি এ সময় সিয়াম পালনে অভ্যস্ত থাকে, তাহলে সে সেদিন সাওম পালন করতে পারবে।‘ (বুখারী ও মুসলিম)
এছাড়াও রাসূল (সা.) রমজান আগমনের পূর্বে নিজের সাহাবীদেরকে উদ্দেশ্য করে এ মাসের মহত্ব এবং বরকত সম্পর্কে আলোচনা করতেন এবং এ মাসের বরকতের ভান্ডার থেকে নিজেদের পরিপূর্ণ অংশ সংগ্রহ করার জন্য ব্যাপক পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিতেন। এ সংক্রান্ত রাসূল (সা.)-এর কিছু বর্ণনা :
‘রমজান মাসের আগমনে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শয়তানগুলোকে শিকলবন্দী করা হয়।‘ (বুখারী)
‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে একটি ফরয আদায় করলো সে ঐ ব্যক্তির সমতুল্য যে অন্য সময় সত্তরটি ফরয আদায় করলো।‘ (বায়হাকী)
‘আদম সন্তানের প্রত্যেকটি কাজ দশ থেকে সাতশতগুণ বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু আল্লাহ বলেন, রোজাকে এর মধ্যে গণ্য করা হবে না। কারণ রোজা কেবলমাত্র আমার জন্য, আর আমিই এর প্রতিফল দিব।‘ (বুখারী ও মুসলিম)
‘জান্নাতে আটটি দরজা আছে। এর মধ্যে একটির নাম ‘রাইয়ান’। রোজাদাররা ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।‘ (বুখারী, মুসলিম)
এভাবেই রাসূল (সা.) এই মহিমানি¦ত মাসটির গুরুত্ব ও ফযিলত বর্ণনা করে সাহাবীদের এই মাস উদযাপনের জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করতেন।
রাসূল (সা.) এর রমজান
রাসূল (সা.) এই রমযান মাসকে ‘শাহরুল আযিম‘ এবং ‘শাহরুম মোবারক‘ নামে আখ্যায়িত করেছেন। অর্থাৎ এ মাসটি হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মহান মাস, বরকতের মাস। রাসূল (সা.) এই বিশেষ সময়টিতে বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকতেন এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীদেরকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। রাসূল (সা.) এই সময়ে বিশেষভাবে কিছু ইবাদত করতেন। যেমন-
কুরআন তিলাওয়াত
রমজান মাসের বরকত ও মহত্বের অন্যতম প্রধান কারণটি হচ্ছে এ মাসে পবিত্র কুরআন নাযিল করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা একথাটি এভাবে এরশাদ করেছেনÑ
‘রমজান সেই মাস, যে মাসে মানবজাতির পথ প্রদর্শন, পথ প্রদর্শনের উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ এবং ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যকারী কুরআন নাযিল হয়েছে। অতএব যে ব্যক্তি এ মাসটি পেল সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে।‘ (সূরা আল বাকারা : ১৮৫)
রমজান মাসে রাসূল (সা.) অন্যান্য সময়ের তুলনায় কুরআন তিলাওয়াতের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন। এ মাসে তিনি জিবরাঈল (আ.) এর কাছে কুরআন শিখতেন। হাদীসে বর্ণিত আছে যে, এই সময় তিনি জিবরাঈল (আ.)-কে কুরআন পড়ে শুনাতেন।
কিরামে লাইল
পবিত্র রমজান মাসে রাসূল (সা.) দাঁড়িয়ে কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার কাজকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতেন। এজন্য তিনি দু’টি সময়কে বেঁছে নিতেন। তা হলোÑ রাতের প্রথমাংশে বা মধ্যভাগে তারাবীহ নামাযে দাঁড়ানো এবং মধ্যরাতের পর বা রাতের শেষ তৃতীয়াংশে তাহাজ্জুদের নামাযে দাঁড়ানো।
তারাবীহর সালাত
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন-‘যে ব্যক্তি রমজানের ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় কিয়ামে রমজান অর্থাৎ তারাবীহর সালাত আদায় করবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে।‘ (বুখারী)
আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল (সা.) একদিন রমজানের রাতের মধ্যভাগে বের হলেন, অতঃপর মসজিদে নামায পড়লেন এবং কিছু লোক তাঁর পিছনে সালাত আদায় করলো। দ্বিতীয় দিন এর চাইতে অধিক মানুষ জামাতে শামিল হলো। তৃতীয়-দিন মুসল্লির সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। চতুর্থ রাতে, মসজিদের ধারণ ক্ষমতার অধিক মানুষ হলো, কিন্তু এ রাতে তিনি আর বের না হয়ে ফজরের সালাত আদায়ের সময় আসলেন এবং সালাত আদায় শেষে লোকদের দিকে ঘুরে বললেন- তোমাদের অবস্থা আমার অজানা নেই, কিন্তু আমি এই সালাত তোমাদের উপর ফরজ হবার আশংকায় রাতে বের হইনি। কেননা তোমরা তা আদায় করতে অক্ষম হয়ে পড়বে। অতঃপর রাসূল (সা.)-এর ইন্তেকাল হলো আর ব্যাপারটি এভাবে থেকে গেল।‘
তারাবীহ’র সালাত ফরয না হলেও, রাসূল (সা.) ও তাঁর সাহাবাগণ বিশেষ গুরুত্বসহকারে নিয়মিতভাবে দীর্ঘ কুরআন তিলাওয়াত সহকারে এই সালাত পড়তেন।
তাহাজ্জুদের নামায
আবু সালামাহ ইবনু আবদুর রহমান (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, রমজানে (রাতে) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নামায কেমন ছিল? তিনি জবাব দিলেন, ‘রমজানে এবং রমজান ব্যতীত অন্য সময় এগার রাকআতের বেশি তিনি পড়তেন না। প্রথমত তিনি চার রাকাআত পড়তেন। এ চার রাকআতের সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে তুমি কোন প্রশ্ন করো না। তারপর আরও চার রাকাআত পড়তেন। এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে (আর কি বর্ণনা দিব, কাজেই কোন) জিজ্ঞাসাই করোনা। এরপর পড়তেন বিতরের তিন রাকাআত। আমি (আয়িশা রা.) বলতাম, ‘ হে আল্লাহর রাসূল- আপনি বিতর আদায়ের আগে ঘুমিয়ে যাবেন।‘ তিনি বলতেন : ‘হে আয়শা, আমার দু’চোখ ঘুমায় বটে কিন্তু আমার কালব নিদাচ্ছন্ন হয় না।‘ (সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং-১৮৭০)
তিনি এতো দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন যে তাঁর পা ফুলে যেতো, আয়শা (রা.) বলতেন, ‘হে রাসূল, আল্লাহ তো আপনাকে ক্ষমা করেই দিয়েছেন, তাহলে এতো কষ্ট করছেন কেন?‘ রাসূল (সা.) বলতেন, ‘আমি কি আল্লাহর শোকরগুজার বান্দা হবো না।‘
রমজানের শেষ দশ দিনের আমল
আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রমজানের শেষ দশক আসত, তখন নবী (সা.) তার কাপড় (লুঙ্গি) কষে বেঁধে নিতেন (বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। রাসূল রমজানের শেষ দশ দিনে অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল হয়ে যেতেন। এই দিনগুলোর ইবাদতের দু’টি বিশেষ ধরন হচ্ছে-১. শবে কদর বা লাইলাতুল ক্বদর অন্বেষন , ২. ইতিকাফ।
লাইলাতুল ক্বদর অন্বেষন
‘নিশ্চয়ই আমি নাযিল করেছি এ কুরআন মহিমান্বিত রাতে। আর আপনি কি জানেন ‘মহিমান্বিত রাত’ কি? মহিমান্বিত রাত হাজার মাস অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ।‘ (সূরা ক্বদর:১-৩)
কুরআন নাযিলের রাত হিসেবে লাইলাতুল ক্বদর এক অনন্য মর্যাদার অধিকারী। এ রাতের ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীর খুব নিকটে আসেন এবং ডেকে বলেন, কে আছ এমন যে আমার কাছে যা চাইবে, তাকে তাই দেবো, কে আছে এমন, যে আমার কাছে নিজের গুনাহ মাফ চাইবে আর আমি তাকে মাফ করে দেবো।‘ (বুখারী, মুসলিম)
লাইলাতুল ক্বদর-এর রাত কোনটি এ ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আল্লাহ বা তাঁর রাসূল দেননি। এ ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে লাইলাতুল ক্বদর-এর সংবাদ দেবার জন্য বের হয়েছিলাম, তখন তোমাদের দুই ব্যক্তি ঝগড়া করছিল। ফলে এই রাতের নির্দিষ্ট তারিখের পরিচয় হারিয়ে যায়। সম্ভবত: এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত আছে। তোমরা রমজানের শেষ দশকে বেজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধান কর।‘ (বুখারী)
রাসূল (সা.) রমজানের শেষ দশ রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ক্ষমা প্রাপ্তির জন্য সর্বক্ষণ ব্যতিব্যস্ত থাকতেন এবং বিরামহীন ইবাদত করতেন। রাসূল (সা.) এই সময়ে একটি বিশেষ দোয়া বেশি করে পড়তেন-
‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহীব্বুন আফওয়া ফা’ফু আন্নী‘Ñ (আমহদ, তিরমিযী)
অর্থঃ ‘হে আমার আল্লাহ, তুমি মহান ক্ষমাশীল, ক্ষমা প্রার্থনা তোমার নিকটে খুবই প্রিয়, অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দাও।‘
ই’তিকাফ
আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (সা.) রমজানের শেষ দশকে ই’তিকাফ করতেন। ইন্তেকাল পর্যন্ত তিনি এ নিয়ম পালন করেছেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর স্ত্রীগণ ই’তিকাফের এ ধারা অব্যাহত রাখেন। (বুখারী)
ই’তিকাফ শব্দের অর্থ কোন স্থানে স্থির থাকা, অবস্থান করা বা আবদ্ধ থাকা। শরীয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে দুনিয়াবী অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মসজিদে বা নিভৃত স্থানে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকা।
আল্লাহর রাসূল (সা.) রমজানের শেষ দশদিন ই’তিকাফে বসতেন এবং যিকির, তাসবীহ, তাকবির, ইস্তেগফার দরূদ পাঠ, কুরআন তিলাওয়াত, সালাত আদায় সহ সব ধরনের ইবাদতের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন।
দান-সাদকাহ
রাসূল (সা.) রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি দান করতেন। ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (রা.) ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমজানে জিবরাঈল (আ.) যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাঈল (আ.) তাঁর সঙ্গে একবার সাক্ষাত করতেন। আর নবী (সা.) তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরাঈল যখন তাঁর সাথে সাক্ষাত করতেন তখন তিনি রহমতসহ প্রেরিত বায়ুর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন।‘ (বুখারী)
রাসূল (সা.)-এর সাহরী ও ইফতার
রাসূল (সা.) অনেক সময় না খেয়েও রোজা রেখেছেন। তবে সাহরী খাওয়ার ব্যাপারে তিনি উৎসাহ দিয়েছেনÑ ‘তোমরা সাহরী খাও, কেননা সাহরীতে বরকত রয়েছে।‘ (বুখারী)
রাসূল (সা.) সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করতেন। এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘লোকেরা যতদিন শীঘ্র ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে, ইফতারে পানি, খেজুর বা যা সহজলভ্য এমন কিছু দিয়ে-ই রোজা ভাঙ্গা রাসূল (সা.) পছন্দ করতেন। তিনি দ্রুত ইফতার করতেন এবং মাগরিবের নামায ও তাড়াতাড়ি পড়তেন। একা ইফতার করতেন না। অভাবীদের ইফতার করাতে বিশেষভাবে পছন্দ করতেন। রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘ যে ব্যক্তি এ মাসে কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মোচন ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি অবধারিত।‘ (বায়হাকী)
রোজা অবস্থায় যে সব কাজ করা রাসূল (সা.) বিশেষভাবে অপছন্দ করতেন
রোজার আরেক অর্থ হচ্ছে ‘বিরত থাকা’। মানুষের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার প্রশিক্ষণই আমরা রমজান থেকে পেয়ে থাকি। রাসূল (সা.) রোজা অবস্থায় কিছু কাজ করাকে খুবই অপছন্দ করতেন।
জাবির (রা.) বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন-পাঁচটি ব্যাপারে রোজাদারের রোজা বরবাদ করে দেয়। যথা-
১. মিথ্যা বলা; ২. চোগলখুরি বা ক‚টনামি করা; ৩. পেছনে নিন্দা করা বা গীবত; ৪. মিথ্যা কসম করা ও ৫ কামভাব নিয়ে দৃষ্টিপাত করা।
এছাড়া রোজা রাখা অবস্থায় ঝগড়া করা, গালি-গালজ করাকেও রাসূল (সা.) অত্যন্ত গর্হিত কাজ হিসেবে বলেছেন। কোন রোজাদারের সাথে কেউ ঝগড়া করতে আসলে বা তাকে গালি দিলে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সে যেন বলে, আমি রোজাদার বা সায়িম।‘ (বুখারী)
রমজান পরবর্তী সময়ে রাসূল (সা.)
সর্বোপরি, কুরআন ও ইসলামের মৌলিক দাবী নিজের জীবনে এবং সমাজে প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সারা জীবন ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। রমজানের তাকওয়া অর্জনের এই প্রশিক্ষণের বীজ সারাবছর ধরেই ফুলে-ফলে শোভিত এক বৃক্ষে পরিণত হতো যেন রাসূল (সা.) এর জীবনে।
এভাবেই, একজন সফল রোজাদারের প্রকৃত প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হতে দেখি আমরা রাসূল (সা.)-এর সিয়াম সাধনায়, রমজান পালনের ব্যাপারে এই মহামানবের জীবনী-ই আমাদের জন্য সর্বোত্তম ও প্রকৃত আদর্শ। কিন্তু বর্তমানে, রোজা রাখা অবস্থায় অহেতুক গল্প করে, টি.ভি, দেখে, ঘুমিয়ে সময় নষ্ট করা; তারাবীহর নামায, তাহাজ্জুদের নামায, কোরআন তিলাওয়াতসহ অন্যান্য ইবাদতে উদসিনতা দেখিয়ে সেহরী, ইফতারের রসনা বিলাস ও অহেতুক ঈদ শপিং-এ ব্যস্ত থেকে সময় নষ্ট করার যে সংস্কৃতি আমরা চালু করেছি, তা রাসূল (সা.)-এর সুন্নাতের সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা সত্যিই ভাববার বিষয়। আল্লাহ আমাদের সেই রোজাদারদের মধ্যে শামিল না করুন, যাদের ব্যাপারে রাসূল (সা.) সতর্ক করেছেন এই বলে- ‘অনেক রোজাদার এমন আছেন, যাঁরা নিজেদের রোজা থেকে ক্ষুধা-পিপাসায় কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পান না। অনেকে রাতের নামায পড়ে থাকেন, কিন্তু তাদের নামায রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনা।‘ তাকওয়া ও আল্লাহ প্রেমের ধারায় সিক্ত হয়ে জীবনের প্রতি দিনকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে অতিবাহিত করার প্রেরণাই হচ্ছে সিয়াম সাধনার প্রকৃত তাৎপর্য। আর এটাই রাসূল (সা.)-এর সিয়াম পালনের মূল অনুসরণীয় দিক। আল্লাহ পাক আমাদের তাঁর অনুসরণে সঠিকভাবে রমজান পালন ও এর শিক্ষাকে জীবনে বাস্তবায়নের তৌফিক দিন। আমীন।
Comments are closed.