রমযান

“যে লোক এই মাসটি পাবে সে যেন অবশ্যই এই মাসের রোজা পালন করে।” (আল কোরআন)
পবিত্র কোরআনে রোজাকে ‘রমাদান’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যার অর্থ জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে দেয়া। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ‘সুবহে সাদিক’ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যাবতীয় ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকার নামই হচ্ছে রোজা। রোজা থেকে সঠিক ফায়দা হাসিলের জন্য নিন্মোক্ত মাসলাগুলো জানা একান্ত প্রয়োজন।

রমযানের প্রকারভেদ
রোজা ছয় প্রকার
১. ফরজ রোজাঃ রমযান মাসের রোজা।
২. ওয়াজিব রোজাঃ কাফ্ফারা রোজা, মানতের রোজা।
৩. সুন্নাত রোজাঃ আশুরার রোজা; (মহররম মাসের ৯, ১০ তারিখ), আরাফাত দিবস; (জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ,) আইয়ামে বীযের রোজা; চাঁদের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ)

৪. নফল রোজাঃ
– ফরজ ওয়াজিব, সুন্নাত বাদে সব রোজা নফল। যেমন- শাওয়াল মাসে যে কোন ৬ দিন রোজা, শাবান মাসের ১৫ তারিখ রোজা রাখা, সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা, জিলহজ্জ মাসের ১ম ৮ দিন রোজা রাখা।

৫. মাকরুহ রোজা
– শুধুমাত্র শনিবার বা রবিবার রোজা রাখা।
– শুধুমাত্র আশুরার দিন রোজা রাখা।
– স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোজা রাখা।
– মাঝে কোন বিরতি না দিয়ে ক্রমাগত রোজা রাখা।

৬. হারাম রোজাঃ বছরে নিুোক্ত ৫দিন রোজা রাখা হারাম
– ঈদুল ফিতরের দিন রোজা রাখা
– ঈদুল আযহার দিন রোজা রাখা
– ১১, ১২ ও ১৩ই জিলহজ্জ তারিখে রোজা রাখা।

রোজার ফরজঃ রোজার ফরজ ৩টি
১. নিয়ত করা
২. সব ধরণের পানাহার থেকে বিরত থাকা।
৩. ইন্দ্রিয় তৃপ্তি বা যৌন বাসনা পূরণ থেকে বিরত।

রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত
১. মুসলিম হওয়া
২. বালেগ হওয়া
৩. অক্ষম না হওয়া।
৪. মহিলাদের হায়েজ ও নেফাস হতে পবিত্র হওয়া

রোজা ভঙ্গের কারণ 
এর জন্য শুধু কাজা রোজা রাখলেই চলবে।
১. কুলি করার সময় হঠাৎ গলার ভেতর পানি প্রবেশ করলে।
২. বলপূর্বক গলার ভিতর কোন কিছু ঢেলে দিলে।
৩. নাকে অথবা কানে ঔষধ ঢেলে দিলে।
৪. ইচ্ছে করে মুখ ভর্তি বমি করলে।
৫. অখাদ্য, যথা- কাঁকড়, মাটি, কাঠের টুকরো খেয়ে ফেললে।
৬. পায়খানার রাস্তায় বা গুহ্যদ্বারে পিচকারী দিলে।
৭. পেটে বা মস্তিষ্কে ঔষধ লাগানোর ফলে তার তেজ যদি উদর বা মস্তিষ্কে প্রবেশ করে।
৮. নিদ্রাবস্থায় পেটের ভিতর কিছু ঢুকলে।
৯. রাত আছে বা সূর্য ডুবে গেছে মনে করে কিছু খেলে।
১০. মুখে বমি আসার পর পুনরায় তা গিলে ফেললে।
১১. দাঁত থেকে ছোলা পরিমাণ কিছু বের করে তা গিলে ফেললে।

রোজার কাফ্ফারা
রোজার কোন একটি ফরজ ভঙ্গ করলে তার কাফফারা দেওয়া ওয়াজিব হয়।
১. একাধারে ৬১ টি রোজা রাখা (কাফ্ফারা ৬০টিও ভাঙ্গা ১টি)
২. একাধারে রোজা রাখতে অক্ষম হলে ৬০ জন গোলাম আযাদ বা মুক্ত করে দিতে হবে।
যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ
১. এমন রোগে আক্রান্ত যে জীবননাশের আশংকা আছে।
২. হায়েজ, নেফাস ও সন্তান প্রসবকালে।
৩. সন্তান সম্ভবা, প্রসূতি মাতার ও দুগ্ধপোষ্য সন্তানের বিশেষ ক্ষতির আশংকা থাকলে।
৪. কোন বৃদ্ধ শক্তিহীন হলে।
৫. সফরকালে।
এ সমস্ত কারণে রমযান মাসে রোজা না রেখে অন্য সময় তা কাযা আদায় করলেই চলে।

×

Comments are closed.