যাকাত

Posted in বিষয়ভিত্তিক on May 31, 2015 by

যাকাতের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ হল যাকাত। এটি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, পবিত্র কুরআনে যাকাত শব্দের উল্লেখ এসেছে বত্রিশ বার, অনেকবার সালাত এবং যাকাতকে একই আয়াতে প্রকাশ করা হয়েছে। সূরা আল বাকারার ১১০ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ (সুবঃ) বলছেন, “তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা কর এবং যাকাত দাও। তোমরা নিজের জন্য পূর্বে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু কর নিশ্চয়ই আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন।” এছাড়াও যাকাত প্রদানকারী সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “তারা এমন লোক যাদেরকে পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিমাণ আলর এখতিয়ারভুক্ত।” (সূরা আল-হাজ্বঃ ৪১)। যাকাতের শাব্দিক অর্থ হল বৃদ্ধি পাওয়া বা পরিশুদ্ধ হওয়া। আর আভিধানিক অর্থ হল ইসলাম নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত (সোনা ৭.৫ তোলা এবং রূপা ৫২.৫ তোলা মূল্যমানের সমান সম্পদের মালিক হলেই যাকাত ফরজ) সম্পদের মালিক প্রত্যেক পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নর-নারী তার সম্পদের ২.৫ শতাংশ প্রতি বছর ইসলাম নির্দেশিত পন্থায় অসহায়, দরিদ্র মানুষের কল্যাণে ব্যয় করবেন।

যাকাতের উদ্দেশ্য

পরিপূর্ণ রূপে যাকাত এর হক আদায় করতে চাইলে আমাদের জানা উচিত যে, যাকাত কি জন্যে ফরয করা হয়েছে এবং কোন্ উদ্দেশ্য এর থেকে হাসিল করা যায়।আল কোরআন ও সুন্নাহতে এ সম্পর্কে যা কিছু বলা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করলে জানা যাবে যে, যাকাতের তিনটি উদ্দেশ্য একটি বুনিয়াদী ও ব্যক্তিগত এবং অন্য দু’টি স্থানীয় ও সামাজিক।

১. আত্মশুদ্ধি

যাকাতের সত্যিকার এবং বুনিয়াদী উদ্দেশ্য হলো অন্তরের পবিত্রতা অর্জন। যাকাত দাতার অন্তর দুনিয়ার লোভ-লালসা থেকে পাক হবে এবং পাক হওয়ার পর নেকী ও তাকওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যাবে। আল কোরআনে বলা হয়েছে-‘এবং এই জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে ঐ ব্যক্তিকে যে আল্লাহকে ভয় করে,যে নিজের মাল অপরকে দান করে নিছক পাক হওয়ার জন্য।‘ (সূরা আল লাইল : ১৭-১৮)

‘তাদের ধন-সম্পদ থেকে তুমি সদকা গ্রহণ কর, যাতে করে তুমি তাদেরকে পাক-সাফ করতে পার এবং তাদের আত্মশুদ্ধি করতে পার।‘ (সূরা আত্ তওবা : ১০৩)

২. অভাবগ্রস্তদের স্বচ্ছলতা বিধান

যাকাতের দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো সমাজের নিঃস্ব লোকদের সাহায্য করা এবং তাদের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ করা। নবী করীম (সা.) বলেছেন:

‘বস্তুত: আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন। এ যাকাত তাদের ধনবানদের কাছ থেকে নেয়া হবে এবং বিতরণ করা হবে তাদের মধ্যে যারা অভাবগ্রস্ত।‘ (মুসলিম)

‘এবং তারা আল্লাহর প্রেমে ধন-সম্পদ দান করে আত্মীয়-স্বজনকে, এতীম-মিসকীন, মুসাফির ও সাহায্য প্রাথীকে এবং মুক্তি লাভের জন্যে।‘ (সূরা আল বাকারা : ১৭৭)

সুতরাং যাকাতের এই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যাকাতের মাল অভাবগ্রস্তদের অভাব পূরণের উপায় হয়ে যাওয়াটা একান্ত জরুরী।

৩. দ্বীনের সাহায্য

যাকাতের দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্দেশ্যগুলোর দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হলো দ্বীনের রক্ষণাবেক্ষণ ও সাহায্য করা।

‘এ সাদকাসমূহ (যাকাত) গরীব মিসকীন ও সাদকা আদায়কারী কর্মচারীদের আর যাদেরকে সন্তুষ্ট করা আবশ্যক তাদের জন্যে। গোলাম মুক্ত করার জন্যে। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঋণমুক্ত করার জন্য আল্লাহর পথে এবং বিদেশ ভ্রমণকারীদের জন্যে।‘ (সূরা আত্ তওবা : ৬০)

‘আল্লাহর পথে‘ অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীনের জন্য যত চেষ্টা চরিত্র ও সংগ্রাম করা হবে তার জন্যে।

যাকাত ব্যবস্থা আসলে গোটা ইসলামী সমাজকে কৃপণতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা, হিংসা, বিদ্বেষ, মনের কঠিনতা এবং শোষণ করার সূ² প্রবণতা থেকে পাক পবিত্র করে। এ কারণে যাকাত প্রত্যেক নবীর উম্মতের ওপর ফরয ছিল।

যাকাতের মূলনীতি

ইসলামী অর্থব্যবস্থায় যাকাতের ভ‚মিকা অপরিসীম। এটি এমন একটি বাস্তবসম্মত অর্থনীতি যা একটি ভারসাম্যপূর্ণ অর্থব্যবস্থা গঠনে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে।

তবে যাকাতের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত কল্যাণ অর্জিত না হওয়ার কারণ হলো যাকাত আদায় ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে শরীয়াহর মূলনীতি অনুসরণ না করা। তাই কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে যে মূলনীতিগুলো পাওয়া যায় তা আমাদের জানা প্রয়োজন।

প্রথমত : যাকাত আদায় প্রতিটি সাহেবে নিসাব মুসলমান নর ও নারীর জন্যে বাধ্যতামূলক। সাহেবে নিসাব মুসলমান তার প্রদেয় যাকাত আদায় না করলে যেমন আখিরাতে ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হবে তেমনি ইহকালেও তাকে রাষ্ট্রের কঠোর কৈফিয়তের সম্মুখীন হতে হবে।

দ্বিতীয়ত : রাষ্ট্রই অর্থাৎ সরকারই যাকাত সংগ্রহ করবে তার নিজস্ব মেশিনারীর সাহায্যে।

রাসূলে করীম (সা.) যথাযথভাবে যাকাত আদায়ের জন্য প্রতিবছর বিভিন্ন অঞ্চলে এবং বড় বড় গোত্র প্রধানদের কাছে লোক পাঠাতেন। ঐসব নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আদায়কৃত অর্থ, গবাদিপশু ও খাদ্যশস্য এনে জমা দিতেন বায়তুলমালে। এরপর সেখান হতেই যাকাতের হকদারদের মধ্যে তা বিলি বণ্টন করা হত। এ কাজের জন্য ঐ সময় আট ধরনের কর্মচারী নিযুক্ত ছিল।

তৃতীয়ত

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাকাতের প্রাপক হিসেবে যে আট শ্রেণীর লোকের কথা উল্লেখ করেছেন তাদের মধ্যেই যাকাতের অর্থ সম্পদ বণ্টন করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে ‘যাকাত হলো কেবল ফকীর, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। এই হলো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান।‘ (সূরা আত্ তাওবাহ : ৬০)

যাকাত ওয়াজিব হওয়ার শর্ত

যাকাত ওয়াজিব হওয়ার শর্ত সাতটি- ১. মুসলমান হওয়া; ২. নেসাবের মালিক হওয়া; ৩. নেসাব প্রকৃত প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া; ৪. ঋণগ্রস্ত না হওয়া; ৫. মাল এক বছর স্থায়ী হওয়া; ৬. জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া; ৭. বালেগ হওয়া।

যাকাতের হার

একজন ব্যক্তি মূলধনের যে পরিমাণ মালিক হলে তার উপর যাকাত ফরয হয় সেই পরিমাণকে যাকাতের নেসাব বলা হয় এবং যে ব্যক্তির কাছে নেসাব পরিমাণ মূলধন থাকবে তাকে সাহেবে নেসাব বলা হয়।

একজন সাহেবে নেসাব ব্যক্তি যে হারে যাকাত আদায় করবেন :

  • কৃষিজাত ফসল উৎপন্নের জন্যে সেচ ব্যবস্থার প্রয়োজন হলে উৎপন্ন ফসলের বিশ ভাগের এক ভাগ, বৃষ্টির পানিতে ফসল উৎপন্ন হলে তার এক-দশমাংশ।
  • সঞ্চিত টাকা-পয়সা, সোনা-রৌপ্যর অলংকার এবং তেজারতি মালের শতকরা আড়াই ভাগ।
  • বনে-জঙ্গলে চরে বেড়ানো গৃহপালিত পশুর শতকরা দেড় থেকে আড়াই ভাগ।
  • খনিজ পদার্থের শতকরা বিশ ভাগ।

অর্থনৈতিক ভারসাম্য

যাকাতের অন্যতম বুনিয়াদী উদ্দেশ্য হলো অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টি। ধন আবর্তনশীল রাখার জন্যে এবং সমাজের সকল শ্রেণীর সুবিধা ভোগের জন্যে ধনশালী ও পুঁজিপতিদের নিকট থেকে যাকাত নেয়া হয় এবং তা দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এতে করে ধন একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর নিকট সঞ্চিত না থেকে সমাজের সকল শ্রেণীর মধ্যে আবর্তনশীল হতে থাকে যা অর্থব্যবস্থার ভারসাম্য তৈরীতে সাহায্য করে।

যাকাত ও সামাজিক নিরাপত্তা

অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সামাজিক নিরাপত্তার একটি প্রধান অংশ।

যাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

১. যাকাত হচ্ছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রধান ভিত্তি। যাকাতের হকদার হচ্ছে যারা কর্মক্ষমতাহীন এবং যারা কর্মক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও উপার্জনহীন অথবা পর্যাপ্ত উপার্জন করতে পারছে না। যাকাতের মাধ্যমে এই সব মানুষকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দান সম্ভব।

২. যাকাতের মাধ্যমে অর্থনৈতিক পুনর্বাসন করা সম্ভব। রাষ্ট্রীয় তদারকিতে যাকাত অভাবগ্রস্তকে পর্যাপ্ত পরিমাণ দিতে হবে যাতে সে আর অভাবগ্রস্ত না থাকে।

হযরত ওমর (রা.) এর মত হচ্ছে,‘যখন দিবেই, তখন স্বচ্ছল বানিয়ে দাও।‘

৩. যাকাত সূত্রে ব্যক্তির প্রদেয় অর্থ সম্পদ রাষ্ট্রীয়ভাবে সংগৃহীত হলে বিশাল তহবিল গড়ে উঠতে পারে। সহস্র কোটি টাকা একত্রে পরিকল্পিতভাবে ব্যয়িত হলে যে বিশাল সামাজিক সুরক্ষা বলয় তৈরি হবে তাতে সমাজের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দুঃস্থ ব্যক্তির নিরাপত্তার বিধান সম্ভব।

যাকাতের অসাধারণ গুরুত্বও মহত্বের কারণে আল কোরআনে বিরাশি স্থানে এর তাগিদ দেয়া হয়েছে। সাধারণত নামায ও যাকাতের কথা এক সাথে বলা হয়েছে। নামায মানুষকে আল্লাহর ভালবাসার দিকে নিয়ে যায় এবং যাকাত তাকে দুনিয়ার দিকে যাবার জন্য নিরাপদভাবে ছেড়ে দেয় না। এই আর্থিক ইবাদতের মাধ্যমে ব্যক্তি আত্মশুদ্ধির সুযোগ পায় যা তার মধ্যে কিছু মৌলিক গুণাবলীর বিকাশ করে।

যাকাতের মাধ্যমে তৈরি শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা বলয় যে কোন মুসলিম রাষ্ট্রকে দিতে পারে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার মর্যাদা। যা বিশ্বের বুকে অনুকরণীয় আদর্শ হতে পারে। তবে এ জন্য প্রয়োজন ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যথাযথভাবে যাকাত আদায় ও বণ্টন করা।

সমাজে প্রচলিত যাকাত ব্যবস্থা
যাকাত কোন দয়া দাক্ষিণ্যের নাম নয়। আল্লাহ (সুব:) পবিত্র কুরআনে সূরা আয-যারিয়াতের ১৯ নাম্বার আয়াতে এই বিষয়ে বলছেন, “এবং তাদের ধন সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের হক আছে।” সুতরাং যাকাত এমনই এক ব্যবস্থার নাম যার মাধ্যমে মুসলিমগণ সুযোগ পেয়ে থাকেন হকদারদের হক বুঝিয়ে দিতে। এই আয়াতের ভিত্তিতে বর্তমান প্রেক্ষাপটে যাকাত নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
আমাদের সমাজে অনেকে যাকাত দিচ্ছেন আবার অনেকে দিচ্ছেন না। আর যারা দিচ্ছেন তারা এমন এলোমেলোভাবে দিচ্ছেন যাকাতের প্রকৃত সুফল জনগণ লাভ করছে না, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। প্রতি বছর এক শ্রেণীর লোক যাকাত দেওয়ার নামে লোক দেখানো শাড়ি, লুঙ্গি বিতরণ করেন যেখানে হাজার হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন আর ভীড়ের চাপে মারা যান অনেকে। এইরকম অনৈসলামিক প্রক্রিয়ায় ৯০ শতাংশ মুসলিমের দেশে যাকাত ব্যবস্থাপনা হয়ে থাকে। আবার অনেকে যাকাতের অর্থকে এত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করেন যা দিয়ে যাকাতের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধন সম্ভব নয়। এমনকি যারা যাকাত নিতে আসেন তাদের আÍ-সম্মানবোধ বিসর্জন দিতে হয় যা হওয়ার কথা ছিল না। কারণ এটি তাদের হক।

একটি সুষ্ঠু যাকাত ব্যবস্থাপনা কি করে আমরা করতে পারি? যেখানে রাষ্ট্রব্যবস্থা সততার উপর নয়, সেখানে রাষ্ট্রের উপর নির্ভর করা যায় না, যেনতেন সংগঠনের উপরও নির্ভর করা যায় না। অনেক গবেষকের লেখা পর্যালোচনা করে আমার মনে হয়েছে ইসলামী সমাজ কাঠামো যেখানে প্রতিষ্ঠিত নয় সেখানেও অতি সফল যাকাত ব্যবস্থাপনা দাঁড় করানো সম্ভব। আজ সেই রকমই একটি যাকাত ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আলোকপাত করব।

বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে যাকাত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি কেমন হওয়া উচিত
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মসজিদের সংখ্যা ২,৫০,০০০ এর অধিক, প্রতিটি মসজিদকে ঘিরে গড় মুসলিমের সংখ্যা ৬০০ বা পঞ্চাশটি পরিবার। সুতরাং এটি এমন জটিল বিষয় নয় যে খুঁজে বের করা বা জানা এই ৫০টি পরিবারের মধ্যে কতটি পরিবার সমস্যায় রয়েছে কিংবা যাকাত প্রাপ্তির যোগ্য, অথবা কতটি পরিবার যাকাত প্রদানের যোগ্য? মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন এবং এলাকার সৎ পরহেজগার ইসলামের অনুসারী ব্যক্তিদের সমন¦য়ে পাঁচ হতে সাত সদস্যের একটি মসজিদ ভিত্তিক যাকাত কমিটি থাকতে হবে। এই কমিটিই যাকাত আদায় করবে এবং বিতরণ করবে। এতে সময়ের সাথে সাথে এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হার প্রকাশ্যে নিুগামী হতে বাধ্য।
অধিকন্তু প্রশ্ন জাগে উমর (রা.) এর গল্প বলা হুজুরগুলোর জানা থাকা উচিত নয় কি তাদের পিছনে নামাজ পড়া এই পঞ্চাশটি পরিবারের মধ্যে কোন পরিবারের মানুষ কি ধরনের সমস্যায় আছে? আজ যদি প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর উক্ত কমিটি সত্যি সত্যি পঞ্চাশটি পরিবারের খবর রাখতেন তাহলে কি জানা সম্ভব হতো না কারা না খেয়ে আছেন? কিংবা কারা ছেলেমেয়ের স্কুলের বেতন দিতে পারছে না? কিংবা কারা ঋণে জর্জরিত? দোষ কিন্তু ইসলামের ধ্বজাধারীদের ঘাড়ে গিয়েই পড়বে। প্রকৃত ইসলামী ব্যবস্থাপনায় মসজিদ ভিত্তিক যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ নিশ্চিতে মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন, সৎ ও পরহেজগার ইসলামী অনুশাসন মানা লোকগুলো এগিয়ে আসলে এই দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী থাকার কথা নয়। আর এই ব্যবস্থাপনার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী ইসলামী সমাজ। যে সমাজ যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণে এগিয়ে থাকবে সে সমাজ জনকল্যাণে তত বেশি সম্পৃক্ত হতে পারবে।

×

Comments are closed.