মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব হল চরিত্রে। উন্নত নৈতিক চরিত্র সম্পন্ন করার জন্য রাসূল (সঃ) কে প্রেরণ করা হয়েছে। তাই আমাদের প্রতিটি কাজ আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ মত হতে হবে। একজন মুসলিম তার দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের মৌলিক নির্দেশ তথা ফরজ-ওয়াজিব, হালাল-হারামগুলো অবশ্যই নিষ্ঠার সাথে পালন করবে।
প্রাত্যহিক জীবন পরিচালনায় যা মেনে চলবে তা হল :
আল্লাহর অনুগত হওয়াঃ
একজন মুসলমানের প্রাত্যহিক জীবনের শুরুই হবে সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্যের স্বীকৃতির মাধ্যমে। দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ হতে বিরত রাখে। রাসূল (সঃ) বলেছেন-
“নামাজ দ্বীন ইসলামের ভিত্তি। যারা নামাজ কায়েম করে তারা দ্বীনকেই কায়েম রাখে, আর যারা নামায ছেড়ে দেয় তারা দ্বীনের ভিত্তি চূর্ণ করে দেয়।”
রাসূল (সা) আরও বলেন-
“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামায ছেড়ে দেয় সে কুফরী করে।”
মূলত নামাজের মাধ্যমে একজন মুসলমান রুকু সিজদা, কেয়াম, তসবীহ, কেরাত ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে এ ওয়াদা করে যে দুনিয়াতে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলবে এবং খোদার নাফরমানি সে করবে না।
বান্দা আল্লাহর কাছে এ ওয়াদা ও চুক্তি করে থাকে ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, দ্বিপ্রহরের সামান্য পরেই, কর্মব্যস্ত বিকাল বেলা সূর্যাস্তের পরপরই এবং রাত্রির কিছু অংশ পার হয়ে গেলে।
এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি এভাবে পরিশুদ্ধ হয় যার কথা রাসূলের হাদীসের মাধ্যমে জানা যায়। রাসূল (সাঃ) বলেন-
“ তোমাদের কারোর বাড়ির নিকটে যদি নদী থাকে, আর সে যদি তাতে দৈনিক পাঁচ বার গোসল করে তাহলে তার গায়ে ময়লা থাকতে পারে কি? সাহাবাগণ বলেন, “ না কখনই থাকতে পারে না।” রাসূল (সাঃ) পুনরায় বললেন ঠিক এভাবে যে ব্যক্তি দৈনিক পাঁচবার ঠিকমত নামায আদায় করে তার মধ্যে কোন গুনাহ থাকতে পারে না।”
কাজেই নামাযের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির সাথে শুধু আল্লাহর সম্পর্কই তৈরি হয় না বরং ব্যক্তি জীবনকে পাক, পবিত্র ও দোষমুক্ত করে তোলে। তাই নামাযের মাধ্যমে হবে দিনের শুরু। আমরা যখন যে কাজেই থাকি না কেন নামাযের সময় হলেই আল্লাহর দরবারে ধরনা দিতে হবে। কেননা এরই মাধ্যমে মানুষের দৈহিক ও মানসিক পবিত্রতা অর্জিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন-
“নিঃসন্দেহে আমিই আল্লাহ্। আমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার ইবাদত কর। আর আমাকে স্মরণের জন্য সালাত কায়েম কর।” (সুরা দোহাঃ১৪)
পরিচ্ছন্নতাঃ
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধাংশ, এ পরিচ্ছন্নতা দরকার যেমন আত্মিক তেমনি দৈহিক।
আত্মার পরিশুদ্ধতা হল আত্মাকে কুফর, শিরক, নাফরমানি ও গোমরাহী অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করা, পুতঃপবিত্র চরিত্রের অধিকারী হওয়া এবং শারীরিক পবিত্রতা হল অপবিত্র জিনিস থেকে নিজেকে পবিত্র করা।
সকল ধরনের নাজাসাত থেকে পরিচ্ছন্ন থাকা, সপ্তাহে একদিন নূন্যতম গোসল করতে হবে। অযু ও গোসল হল পবিত্রতার মাধ্যম। নিয়মিত নখ কাটা ও পরিষ্কার রাখা ও মেসওয়াক করার মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, নবী (সাঃ) বলেছেন- আমি যদি উম্মতের কষ্টের কথা চিন্তা না করতাম, তাহলে তাদের প্রত্যেক অযুর সময় মেসওয়াক করতে বলতাম।
হযরত জাবির (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, “নবী (সাঃ) একদা এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে তিনি ধূলাবালি মিশ্রিত ময়লা কাপড় পরিধান করে এলোমেলো চুলে এসেছেন। তখন তিনি বললেন এর কাছে কি এমন কিছু নেই, যার দ্বারা কাপড় ধুয়ে পরিধান করে আসতে পারে এবং মাথা আঁচড়িয়ে আসতে পারে।”
তাই এমন নোংরা পোশাক পরিধান করা ঠিক নয়। যা অপরের ঘৃণার উদ্রেক করতে পারে। মাথা পরিপাটি রাখা ও হাঁচি দেয়ার সময় মুখে রুমাল দেয়া উচিত।
পোশাক পরিচ্ছদঃ
মহান আল্লাহ্ বলেন-
“হে আদম সন্তানগণ, আমি তোমার জন্য পোশাক নাযিল করেছি। যা তোমাদের লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখে। এবং যা সৌন্দর্যের উপকরণ। আর তাকওয়ার পোশাকই উত্তম।” (সূরা আ’রাফ: ২৬)
পোশাক পরিধানের দুটি উদ্দেশ্য
১। ইজ্জত আবরু ঢেকে রাখা
২। সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা
পোশাক ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়ক। একজন ব্যক্তির পোশাকের মাধ্যমে তার রুচি, ব্যক্তিত্ব, কৃষ্টি বা স্বভাব ফুটে ওঠে। আল্লাহ মানুষকে সুন্দর আকৃতি ও দেহকাঠামো দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তিনি চান তার বান্দারা সুন্দর পোশাক পরিধান করুক। তাই পোশাকের ক্ষেত্রে ইসলামের কিছু দিক নির্দেশনা দেয়া আছে যা আমাদের মেনে চলতে হবে।
এমন পোশাক পরতে হবে যাতে সতর ঢাকা থাকে সে পুরুষ হোক কিংবা নারী। নারীর পোশাক পুরুষ এবং পুরুষের পোশাক নারীর পরিধান করা বাঞ্চনীয় নয়। মুসলমানদের জন্য অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় নির্দেশ বহনকারী পোশাক পরিধান করা ইসলাম অনুমোদন করে না। অথচ মুসলমানদের কৃষ্টি-কালচারে আজ তা ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে। রাসূল (সঃ) বলেছেন “যারা কাপড় পরিধান সত্ত্বেও উলঙ্গ থাকে তারা জাহান্নামী। তারা অপরকে সম্মোহিত করে। আর নিজেরাও অপরের উপরে সম্মোহিত হয়। তাদের মাথা প্রসিদ্ধ বুখত নগরের উটের চোটের ন্যায় বাঁকা অর্থাৎ এরা চলার সময় অহংকার বসত ঘাড় হেলিয়ে দুলিয়ে চলে। এ সকল ব্যক্তিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের সুগন্ধ পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ বহুদূর থেকে পাওয়া যাবে।”
আজ মুসলমানদের পোশাকের দিকে তাকালে দেখা যাবে অনেকেই পোশাক যত ফিটিংস এবং খাট হবে ততই যেন নিজেকে Smart বলে ভাবতে থাকে।
পোশাক সর্বদা নিজের ক্ষমতা ও মর্যাদা অনুযায়ী পরিধান করা উচিত। এমন পোশাক পরিধান করা ঠিক না, যা দ্বারা অহংকার বা আড়ম্বর প্রদর্শিত হয়। এবং অপরকে হেয় প্রতিপন্ন করে নিজের অর্থের প্রাচুর্য প্রদর্শন উদ্দেশ্য হয়। আবার নিকৃষ্ট মানের পোশাক পরিধান করে সম্বলহীনের বেশ ধারণ করা ও ঠিক নয়।
সহজ সরল ও সাদাসিধে চাল চলন ও পোশাক পরিচ্ছেদ এবং শালীনতাকে পছন্দ করে। যেসব পোশাকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ পায় তাকে অপছন্দ করে। একটি কথা মনে রাখা দরকার পোশাক আল্লাহ্র এক বিরাট স্মারক চিহ্ন। যা তিনি অন্যান্য সৃষ্টিকে দেননি। তাই এ নিয়ামত স্মরণ করে আল্লাহ্র কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা উচিত।
রাসূল (সঃ) যখন কোন নতুন পোশাক পরিধান করতেন তখন তিনি সে পোশাকের নাম ধরেও দোয়া করতেন।
“হে আল্লাহ! তোমার শোকর, তুমি আমাকে এ কাপড় পরিধান করিয়েছ। আমি তোমার নিকট উহার কল্যাণকারীতার প্রত্যাশী, কল্যাণের উদ্দেশ্যে কাপড় তৈরি করা হয়েছে। আর আমাকে তোমার আশ্রয়ে দিচ্ছি। এ কাপড়ের মন্দ থেকে, কাপড় যে মন্দ উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে সে মন্দ থেকে।” (আবু দাউদ)
পুরুষের জন্য রেশমী কাপড় পরিধান করা নিষিদ্ধ। এমন আঁটসাঁট ও পাতলা কাপড় পরিধান করা ঠিক নয় যা দ্বারা শরীরের গঠন প্রকৃতি পরিলক্ষিত হয়।
আমাদের সমাজে এক শ্রেণীর লোক আছে যারা পুরান, ছিঁড়া, তালি দেওয়া কাপড় পরিধান, যাতে সম্বলহীনের বেশ ধারণ করে, এবং এটাতে পরহেযগারী বলে মনে করে। শুধু এতুটুকু যথেষ্ট নয়, বরং যারা রুচিশীল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করে তাদেরকে দুনিয়াদার বলে সমলোচনা করা হয়।
হযরত আবু আহওয়াজ (রাঃ) এর পিতা নিজের একটি ঘটনা বর্ণনা করেন যে, “আমি নবী কারীম (সঃ) এর দরবারে অত্যন্ত নিম্নমানের একটি কাপড় পরিধান করে উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার কি কোন ধন সম্পদ আছে? আমি বললাম জ্বি আছে। তিনি বললেন কি ধরনের সম্পদ আছে। আমি বললাম আল্লাহ আমাকে উট, ঘোড়া বকরী, গোলাম ইত্যাদি সর্বপ্রকার ধনসম্পদই দান করেছেন তিনি বললেন আল্লাহ তোমাকে সর্বপ্রকার ধন সম্পদ দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন। তবে তোমার শরীরেও তার দান ও অনুগ্রহের বহিঃপ্রকাশ থাকা উচিত।” (মেশকাত)
অর্থাৎ আল্লাহর নিয়ামতে শোকরিয়া আদায় করতে হবে।
একবার প্রখ্যাত সুফী হযরত আবুল হাসান আলী শাযালী অত্যন্ত উত্তম ধরনের কাপড় পরিহিত ছিলেন। দুনিয়া ত্যাগী অপর এক সূফী তাকে এমতাবস্থায় দেখতে পেয়ে প্রতিবাদ করে বললেন যে, আল্লাহ ওয়ালাদের অত মূল্যবান জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরিধান করার কি প্রয়োজন? হযরত শাযালী বললেন, উত্তম। ভাই এটা হল মহান প্রতাপশালী মহান শক্তিশালী আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। আর তোমার এ সহায় সম্বলহীনতা হলো ভিক্ষুকের ছবি, তুমি নির্বাক অবস্থার দ্বারা মানুষের নিকট ভিক্ষা প্রার্থনা করছ। প্রকৃত পক্ষে ছেঁড়া ফাটা পুরান তালি দেয়া নিম্নমানের পোশাকে যেমন পরহেযগারিতা নেই ঠিক তেমনি পরহেযগারিতা নেই অত্যন্ত মূল্যবান গৌরবময় পোশাক পরিধানের মধ্যেও পরহেযগারিতা মানুষের নিয়ত ও সার্বিক চিন্তাধারার ওপর নির্ভরশীল। প্রকৃত সত্য হল মানুষ তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের ক্ষমতানুযায়ী মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে সমতা রক্ষা করে চলবে।
এ প্রসঙ্গে অন্য আর এক হাদীস স্মরণ করা যায় হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সঃ) বলেছেন, “যার অন্তরে অণুপরিমান অহংকার থাকবে সে বেহেশতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি উঠে বললো ইয়া রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রত্যেক ব্যক্তি এটা চায় যে তার কাপড়খানা সুন্দর হোক, তার জুতা জোড়া উত্তম হোক। নবী (সঃ) বললেন আল্লাহ সুন্দর তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন।”
উপরি উক্ত ঘটনা এবং হাদীসের মাধ্যমে পোশাকের ধরন জানতে পারলাম। শুধু তাই নয় সুন্দর পরিপাটি জীবন হবে মুসলমানের জীবন।
“একদিন নবী করীম (সঃ) মসজিদে ছিলেন। এমতবস্থায় ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত চুল দাড়ি নিয়ে একজন লোক মসজিদে প্রবেশ করল। নবী করীম (সঃ) তাকে হাত দ্বারা চুল দাড়ি ঠিক করার ইঙ্গিত করলেন। নবী করীম (সঃ) বলেন, মানুষের চুল দাড়ি এলো মেলো থাকার চেয়ে পরিপাটি থাকা কি উত্তম নয়?
তা না হলে এমন অবস্থায় মনে হয় যে, সে যেন শয়তান।”
উপরি উক্ত হাদীসগুলোর আলোকে আমরা পোশাকের একটি নমুনা পেলাম। যা মানার মাধ্যমে আমাদের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।
কথাবার্তাঃ
মহান আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন। মুমিনগণ তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উচ্চস্বরে কথা বলো, তার সাথে সে রূপ উচ্চস্বরে বলো না। এতে তোমরা তা টের ও পাবে না। যারা আল্লাহর রাসূলের সামনে কন্ঠস্বর নিচু করে আল্লাহ তাদের অন্তরকে শিষ্টাচারের জন্য শোধিত করেছেন তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।” (সূরা হুজুরাত : ৪)
রাসূল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের জিহ্বা এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে রাখার নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে, আমি তার বেহেশত প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিতে পারি। (বুখারী)
কথাবার্তা এমন একটি অস্ত্র যা দ্বারা কখনো মানুষকে বুলেটের ন্যায় ক্ষতবিক্ষত করে দেয়া যায়, আবার তা দ্বারা মানুষের শ্রদ্ধা সম্মান ও মর্যাদা লাভ করা যায়। তাই হাদীসে এ ব্যাপারে কঠোরতা পরিহারের নির্দেশ দিয়েছে।
পবিত্র কুরআনে রাসূলের (সাঃ) উদাহরণের মাধ্যমে বুঝা গেল কোন মজলিশে অথবা যখন তখন বড়দের বিরক্ত করা যাবে না। মুরব্বীদের কথা বলার ধরন দেখে ধীরে ধীরে বলতে হবে। কন্ঠস্বর উঁচু করে কথা বললে বেয়াদবি হয় এবং নিজের আমলে ঘাটতি এসে যায়। কথাকে কখনো ইনিয়ে বিনিয়ে বলা ঠিক নয় যেন অন্যের মনে কুচিন্তা হয়। আবার এতটা প্রকটভাবেও বলা যাবে না যা দ্বারা ভীতির সঞ্চার হয়।
পবিত্র কুরআনের এ আয়াত শ্রবণের পর হযরত আবু বকর (রাঃ) আরয করলেন- ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর কসম। এখন মৃত্যু পর্যন্ত আপনার সাথে কানাকানির অনুরূপ কথা বলবো। হযরত ওমর এরপর থেকে এত আস্তে কথা বলতেন যে প্রায়ই পুনরায় জিজ্ঞাসা করতে হতো।
হযরত আবু যার (রাঃ) কে লক্ষ্য করে রাসূল (সাঃ) বলেন, যেখানেই যাক, আল্লাহকে ভয় কর, প্রতি গোনাহর পর একটি করে নেকী করবে তাতে করে গোনাহ মুছে যায়। আর মানুষের সাথে মধুর ব্যবহার করবে। “মুসলমান ভাইয়ের সাথে হেসে কথা বলাও এক প্রকার সাদকা।” (তিরমিযী)
আচার ব্যবহার/পারস্পরিক আচরণঃ
ইসলাম একটি উন্নত নৈতিক চরিত্র ও সুসভ্য জাতি গঠনের অঙ্গীকারের নাম। তাই এর মাঝে রয়েছে শিষ্টাচার ও পারস্পরিক মজুবত ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার পন্থা। এগুলো হল-
(ক) সালাম বিনিময়ঃ-
মহান আল্লাহ বলেন “কেউ যখন তোমাদেরকে সম্ভাষণ করে তখন তার চেয়েও উত্তম সম্ভাষণ কর, অথবা অনুরূপভাবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সকল বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।” (সূরা-নিসা ঃ ৮৬)
হযরত আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ- সে সত্তার কসম করে বলছি, যাঁর হাতে রয়েছে আমার জীবন। তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষন না তোমরা মুমিন হও। আর তোমরা পুরোপুরি মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষন না তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি হবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রচলন করো। (মুসলিম)
সালাম দেয়া সুন্নত এবং উহার জবাব দেয়া ওয়াজিব। সালামের শব্দ যত বেশি হবে নেকীও তত বেশি হবে। এ সালামের মাধ্যমে এক মুসলিম অন্য মুসলিমের কল্যাণ কামনা করে থাকে। সালামের পর মোছাফাহ করা দ্বারা আরো বেশি সুসর্ম্পক গড়ে উঠবে।
যদিও সালাম হচ্ছে মুসলমানদের প্রথম সম্ভাষণ তবুও কিছু ক্ষেত্রে তা করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন-কোন বৈঠক চলাকালীন সময়। কেননা এতে শ্রোতা ও বক্তা উভয়ের কাজে ব্যাঘাত ঘটে থাকে। খাওয়ার সময়, বাথরুমে থাকা অবস্থায়, নামাজরত অবস্থায়।
সাজসজ্জাঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সুন্দর, তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। তাই একজন মুমিন ব্যক্তির পোশাক- পরিচ্ছদ, চাল-চলন, কথা-বার্তায় সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো উচিত। তবে সৌন্দর্য বৃদ্ধির চেষ্টায় এমন কোন কাজ করা ঠিক নয় যাতে আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত হয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন-
হে নবী ! মুমিন পুরুষদের বল, তারা যেন নিজেদের চোখকে “বাঁচিয়ে চলে, এবং নিজেদের লজ্জা স্থানসমূহের হেফাজত করে। এটি তাদের পক্ষে পবিত্রতম নীতি। যা তারা করে, আল্লাহ সে বিষয়ে পুরোপুরি অবহিত। আর হে নবী, মুমিন স্ত্রীলোকদের বল, তারা যেন নিজেদের চোখকে বাঁচিয়ে রাখে এবং নিজেদের লজ্জা স্থানসমূহের হেফাজত করে ও নিজেদের সাজসজ্জা না করে দেখায় কেবল সে সব জিনিস ছাড়া যা আপনা হতে প্রকাশিত হয়ে পড়ে এবং যেন নিজেদের বক্ষদেশের উপর ওড়নার আঁচল ফেলে রাখে। আর নিজেদের সাজসজ্জা প্রকাশ করবে না, কিন্তু কেবল এই লোকদের সামনে, তাদের স্বামী, পিতা, নিজের পুত্র, স্বামীর পুত্র, নিজেদের ভাই, ভাইদের পুত্র, বোনদের পুত্র, নিজেদের মেলামেশার স্ত্রী লোক থেকে, নিজেদের দাসী, সেসব অধীনস্থ পুরুষ যাদের অন্যরকম গরজ নেই, আর সেসব বালক যারা স্ত্রীলোকেদের গোপন বিষয় সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হয়নি, তারা নিজেদের পা যমীনের উপর মাড়িয়ে চলাফেরা করবেনা, এভাবে নিজেদের যে সৌন্দর্য তারা গোপন করে রেখেছে, লোকেরা তা জানতে পারে। হে মুমিন লোকেরা, তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর নিকট তওবা কর, আশা করা যায় তোমরা কল্যাণ লাভ করবে। (সূরা আন নূর ঃ ৩০)
এ আয়াতের মাধ্যমে জানা যায় যে অতিরিক্ত সাজসজ্জা নিয়ে বের হওয়া নিষিদ্ধ। মহিলাদের ক্ষেত্রে বের হওয়ার সময় নিজ সৌন্দর্যকে ঢেকে বের হতে হবে।
আজকের সমাজে পত্র পত্রিকাগুলোতে নারী নির্যাতনের যে চিত্র আমরা পেয়ে থাকি, তার জন্য অধিকাংশই এরুপ সৌন্দর্য প্রকাশ করাই দায়ী। এ কারণে ইসলাম এক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আল্লাহ পাক প্রত্যেক ব্যক্তির মাঝে যে রূপ বা সৌন্দর্য দিয়েছেন তাতে হস্তক্ষেপ করা মারাত্নক গুনাহ। আজকাল আল্লাহ প্রদত্ত সৌন্দর্য নষ্ট করে দিয়ে কৃত্রিম সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার চেষ্টা চলছে। এগুলো হারাম।
ভ্রু সরুকরন
মাত্রাতিরিক্ত রূপ, সৌন্দর্য অর্জনের আরও একটি পন্থা হল ভ্রু-প্লাক করা। এটিও ইসলামে সম্পূর্ণরুপে হারাম। রাসূল (সঃ) বলেন “যে স্ত্রীলোক চুল বা পশম উপড়ায় এবং যে করে তাদের উভয়ের উপর অভিশাপ।
বন্ধুত্বঃ
মহান আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না। তোমরা কষ্ট পেলেই তাদের আনন্দ। শক্রতা প্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখ ফসকে বেরোয় আর যা কিছু তাদের অন্তরে লুকিয়ে আছে তা আরো অনেক বেশি জঘন্য। তোমাদের জন্য নির্দেশ বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো যদি তোমরা অনুধাবন করতে সমর্থ হও।” (আল ইমরান :১১৮)
সর্বদা সৎ ও নেককার লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, বন্ধু নির্বাচনেও কথার প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখবে। হাদীসে আরো বলা হয়েছে-
সকল গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার উত্তম উপায় হল জিহ্বা কে সংযত রাখা। তাই ইসলামের সৌন্দর্য রক্ষার্থে এবং নিজের সম্মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিষপ্রয়োজনীয় কথা বাদ দিতে হবে।
রাসূল (সঃ) বলেছেন-
“মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তির চিন্তা করা দরকার যে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে।”
চলার পথে কখনো কোন কাজে বিরোধ হলে তর্ক বির্তক না করে সুন্দরভাবে আপোষ করার চিন্তা করতে হবে। সমস্যাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। প্রতিহিংসার মনমানসিকতা কমিয়ে ফেলা দরকার। একজন মুসলমান কখনো অন্য মুসলমান ভাইয়ের অকল্যাণ কামনা করতে পারে না। ইসলামের এ মহৎ দিকটি সামনে রেখে যদি মুসলমানদের জীবনাচরণ হয় তাহলে সমাজ অনেক সুন্দর হবে। রাসূল (সঃ) বলেন- “তোমরা প্রত্যেকে আপন ভাইয়ের আয়না। সুতরাং সে যদি তার ভাইয়ের মধ্যে কোন খারাপ গুণ দেখে তাহলে তার থেকে দূর করে দেবে।”
দুঃখ ও শোকঃ
দুনিয়ার জীবনে কোন মানুষ দুঃখ-শোক, বিপদাপদ-ব্যর্থতা ও লোকসান থেকে অভয় ও নিরাপদ থাকতে পারেনা। অবশ্য মুমিন ও কাফিরের কর্মনীতিতে পার্থক্য রয়েছে। কাফের দুঃখ ও শোকের আধিক্যের কারণে জ্ঞান ও অনুভূতি শক্তি হারিয়ে ফেলে।
নিরাশ হয়ে পড়ে এমন কি অনেক সময় শোক সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কিন্তু একজন মুমিন ব্যক্তি যে কোন বড় ধরনের দুর্ঘটনায় ধৈর্য্য হারা হয় না বরং ধৈর্য্য ও দৃঢ়তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে বলে থাকে যা হয়েছে তা আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে। নিশ্চয় এতেও কল্যাণ রয়েছে।
আল্লাহ বলেন-
“যে সকল বিপদ আপদ পৃথিবীতে আপতিত হয় এবং তোমাদের ওপর যে সকল দুঃখ-কষ্ট পতিত হয় এ সকল বিষয় সংঘটিত করা পূর্বেই এক পুস্তক (লিপিবদ্ধ, সংরক্ষিত ও গৃহীত অবস্থা) থাকে। নিঃসন্দেহে ইহা আল্লাহরপক্ষে সহজ। যেনো তোমরা তোমাদের অকৃতকার্যতার ফলে দুঃখ অনুভব না কর।”
নবী করীম (সঃ) বলেন “যখন কোন বান্দাহ বিপদে পড়ে তখন আল্লাহ তাআলা তার বিপদ দূর করে দেন, তাকে পরিণামে উত্তম পুরস্কার দান করেন আর তাঁকে এর প্রতিদান স্বরূপ তার পছন্দনীয় বস্তু দান করেন।”
একজন মুমীন সামান্য কষ্টেও আল্লাহকে স্মরণ করবে।
একবার নবী করীম (সঃ) এর চেরাগ নিভে গেলে তিনি দোয়া পাঠ (ইন্না…….রাজিউন) করলেন। জনৈক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ চেরাগ নিভে যাওয়াও কি কোন বিপদ? আল্লাহর নবী বললেন, হ্যাঁ যার দ্বারা মুমীনের কষ্ট হয় উহাই বিপদ।”
এসম্পর্কে হাদীসে আরো বলা হয়েছে-
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, পরীক্ষা যত কঠিন ও বিপদ যত বড় হয় তার প্রতিদানও তত সহজ ও বিরাট হয়। আল্লাহ যখন তাঁর কোন দাসকে ভালবাসেন তখন তাদেরকে পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। সুতরাং যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হন আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট হন। আর যারা এ পরীক্ষার কারণে আল্লাহর প্রতি অসন্তুষ্ট হয় আল্লাহও তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। (তিরমিযী)
অন্যের দুঃখে একজন মুমীন দুঃখ প্রকাশ করবে এবং সাধ্যমত সাহায্য সহযোগিতা করবেও সমবেদনা সান্ত্বনা দান করবে।
হাদিসে আছে “যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্থকে সান্ত্বনা প্রদান করল সে এমন পরিমাণ সওয়াব পাবে যে পরিমাণ সওয়াব বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি পাবে।”
রাসূল (সাঃ) যখন কোন বিষয়ে অধিক চিন্তিত হয়ে যেতেন তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে “সুবহানাল্লাহিল আযীম” আর যখন অধিক কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন তখন ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুম বলতেন।
এছাড়া বিভিন্ন দোয়া পড়া উচিত।
দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ
নিজের উত্তম চরিত্র ও নম্র স্বভাবের পরীক্ষা ক্ষেত্র হল পারিবারিক জীবন। পরিবারের লোকদের মাঝেই সব সময় সম্পর্ক থাকে আর ঘরের অকপট জীবনেই স্বভাব ও চরিত্রের প্রতিটি দিক ফুটে ওঠে। ঐ ব্যক্তিই পূর্ণ মুমীন যে পরিবারের লোকদের সাথে উত্তম চরিত্র, হাসিমাখা ও দয়াসুলভ ব্যবহার করে। পরিবারের লোকদের অন্তর আকর্ষণ করবে এবং স্নেহও ভালবাসা প্রদান করবে।
পরিবারের সদস্য হল মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান তাদের প্রতি নজর দিতে হবে। জীবনের কিছু কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আল্লাহ ও রাসূলের পর মানুষের ওপর সবচেয়ে বড় অধিকার হল পিতা-মাতার।
হযরত আবু উমামা বলেছেন- “এক ব্যক্তি নবী করীম (সাঃ) এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সন্তানের ওপর পিতামাতার কি অধিকার? তিনি বললেন, মাতা-পিতাই তোমার বেহেশত এবং দোযখ।” (ইবনে মাজাহ)
তাই সন্তানদের এমন কোন কাজ করা ঠিক নয় যা দ্বারা পিতা মাতার সম্মান নষ্ট হয়। পিতা মাতার সাথে সর্বদা নম্র ব্যবহার করা এবং সেবাযত্ন ও আর্থিক অভাব পূরণ করা সন্তানের কর্তব্য।
হযরত আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) বলেছেন-
যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় ভোর করল যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর পবিত্র কুরআনে মাতা পিতার সম্মানে যে নির্দেশ দান করেছেন তা পালনে আল্লাহর আনুগত্য করেছে তা হলে সে এমন অবস্থায় ভোর করল যে, তার জন্য বেহেশতের দুটি দরজা খোলা। আর মাতা পিতার মধ্যে থেকে একজন জীবিত থাকলে এক দরজা খোলা। যে ব্যক্তি এ অবস্থায় ভোর করল যে, মাতা পিতা সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশিত পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে সে এমন অবস্থায় ভোর করল যে, তাঁর জন্য দোজখের দুটি দরজা খোলা আর তার মাতা-পিতার মধ্য থেকে একজন জীবিত থাকলে দোজখের একটি দরজা খোলা সে ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল আর আল্লাহর রাসূল মাতা-পিতা যদি তার সাথে সীমা অতিক্রম করে তবুও কি? রাসূল (সাঃ) বলেছেন তবুও। এভাবে তিনি ৩ বার বললেন।
অপর দিকে পিতামাতার কর্তব্য হল সন্তান জন্ম দানের পর থেকে সুন্দর নাম রাখা আর উত্তম আদব ও সামাজিক শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া।
তেমনিভাবে স্বামী স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক, সর্বদা উভয়ই উভয়ের চাহিদা মান মর্যাদা অনুযায়ী চলার চেষ্টা করতে হবে। যে সকল কারণে স্বাম অসন্তুষ্ট হতে পারে এমন কোন কথা বা কাজ করা বাঞ্ছনীয় নয়। স্বামীর সম্পদ, সন্তান সন্ততির রক্ষণাবেক্ষণ করা কর্তব্য।
সন্তান-সন্ততির শিক্ষাদীক্ষার, উত্তম আচরণ শিক্ষা দেয়ার দায়িত্ব পিতামাতার। তাই একজন সন্তান জন্মের পর পিতামাতার কর্তব্য হল তার সুন্দর নাম রাখা এবং প্রতিটি বয়সে তাকে তার কার্যাবলীতে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা, যেন বড় হয়ে এ সন্তান দেশ ও জাতির সম্পদে পরিণত হতে পারে। সন্তান গঠনে মায়ের ভূমিকা বেশি। তাই নেপোলিয়ান বলেছিলেন- “আমাকে একজন আদর্শ মা দাও তাহলে আমি তোমাদের একটি আর্দশ জাতি উপহার দিব।”
পরিবারে সংকীর্ণ পরিধির বাইরে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা একজন ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য। কেননা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। তাই আত্মীয়ের সুখে-দুঃখে, অভাব-অনটনে সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে হবে।
সংসারে কাজের প্রয়োজনে অনেক সময় গৃহ পরিচালিকার প্রয়োজন হয়। তাদের সাথে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইসলামের নিয়ম মেনে চলতে হবে। রাসূল (সাঃ) এক্ষেত্রে নির্দেশ দিয়েছেন তাদের উত্তমরূপে ভরণ-পোষণ দিতে। নিজেরা যা খাবে, পরবে সেরূপ পোশাক পরিধান করাবে, থাকার ব্যবস্থা করবে কখনও প্রহার করা যাবে না। যদি পছন্দ না হয় তাহলে মুক্ত করে দিতে হবে। পত্র-পত্রিকাগুলোতে দেখা যায় গৃহপরিচালিকার উপর লোমহর্ষক নির্যাতন এবং মৃত্যু। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যেন তারা কোন মানুষই না, যেন সমাজের এক অবাঞ্ছিত অংশ। একজন মানুষ দুর্বল বলে তার সাথে এত অমানবিক আচরণ করা কোন ব্যক্তির অধিকারে নেই। এ ব্যাপারে যেমন প্রত্যেক ব্যক্তির সচেতন হওয়া দরকার তেমনি দরকার আমাদের আইনের যর্থাথ প্রয়োগ।
এছাড়াও একজন মুমীন ব্যক্তির যা অর্জন ও বর্জন করা দরকার তা নিম্নরূপঃ
যা অর্জনীয়ঃ
১. সর্বদা আল্লাহর স্মরণকারী।
২. আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল কারী।
৩. ওয়াদা রক্ষা, আমানতের খেয়ানতকারী না হওয়া,
৪. দিনে রাতে আল্লাহর ইবাদতকারী।
৫. প্রতিনিধির দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সৈনিক হওয়া।
৬. আখিরাতে জবাবদিহিতার ভয়ে দুনিয়ার জীবনকে সময়োপযোগী করে ব্যবহার করা।
৭. সর্বদা জান্নাত লাভ আকাঙ্খিত এবং জাহান্নাম হতে পরিত্রাণ লাভে কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি করা।
৮. সর্বদা তওবা ও ইসতেগফার করা।
৯. বেশি বেশি জিকিরে অভ্যস্ত হওয়া।
১০. শরীর ও মনকে কলুষতামুক্ত রাখা।
যা বর্জনীয়ঃ
১. মিথ্যা বলা।
২. গীবত, গোয়েন্দাগিরি ও সন্দেহ না করা।
৩. প্রতারনা, অপব্যয় বর্জন করা।
৪. দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা পরিহার করা।
৫. বিদ্রুপ ও উপহাস না করা।
৬. মুনাফিকী পরিত্যাগ করা।
৭. মদ, জুয়া, রিবা হতে দূরে থাকা।
৮. ব্যভিচার, চুরি হতে বেঁচে থাকা।
৯. দুনিয়া পূজারী না হওয়া।
পরিশেষে বলা যায়, ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা কেবল কিছু আচার অনুষ্ঠানের নাম নয় বরং জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগে রয়েছে এর পদচারণা। এদিকে নির্দেশনাগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে মানার মাধ্যমে প্রকৃত মুসলমানের পরিচয় পাওয়া যাবে। কিন্তু পরিত্যাগের বিষয় আজ মুসলমানদের জীবনে ইসলামের এ শিষ্টাচার নেই বললেই চলে। মুসলমান হিসাবে তারা যে অন্যান্য মানুষের চাইতে পৃথক উম্মত তারা ভুলে গেছে। তাই দেখা যায় তারা হালাল হারাম জানে না। চুরি, ডাকাতি, লেনদেন, ছল-চাতুরীর মালপত্র বিক্রি সকল অপরাধে মুসলমানদের লিপ্ত থাকতে দেখা যায় শুধু তাই নয় এ অবস্থা শিক্ষিত অশিক্ষিত সবার মাঝে দেখা যায়। পোশাক, ওঠা-বসা, চলা-ফেরা, শিক্ষা-দীক্ষা সাহিত্য-সংস্কৃতি সবকিছুতেই আজ মুসলমানরা বিজাতীয় ও বিধর্মীদের কাছ থেকে ধার করেছে। ইসলামে আজ সমাজনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা, শাসননীতি সবই বাদ দিয়ে তদস্থলে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, রাশিয়া, চীন ইত্যাদি দেশের অনুকরণ আজ সর্বত্র। অথচ মুসলমানদের আল্লাহ দায়িত্ব দিয়েছেন ইসলামকে দুনিয়ায় প্রচার প্রসার করতে। এ অবস্থার কারণে আজ মুসলমানদেরকে লাঞ্ছিত অপমানিত হতে হচ্ছে। কোথাও বা হতে হচ্ছে রাজ্যহারা। ইসলামের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার কারণে আল্লাহর সাহায্য ও মদদ পাওয়া যাচ্ছে না।
তাই আজ আমাদের ইসলামকে পূর্ণাঙ্গভাবে মানার অঙ্গীকার করা দরকার। তবে অজ্ঞতার মধ্যে নয় ইসলামী জ্ঞানার্জনের মাধ্যমেই তা মানার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন। আমিন।
Comments are closed.