HSC পরীক্ষার পর মোটামুটি ৩ মাস সময় পাওয়া যায় হাতে। বিশাল সিলেবাসের আলোকে সময়টা খুবই স্বল্প তোমাদের জন্য। প্রতিটি মুহূর্ত তোমাদের জন্য খুবই মূল্যবান। তাই সময়গুলো খুব সাবধানতার সাথে ব্যয় করতে হবে। পড়াশোনায় সাফল্যের জন্য তোমাকে আল্লাহর প্রতি উত্তম তাওয়াক্কুলকারী হতে হবে। ফরজ ইবাদাত গুলো আন্তরিক নিষ্ঠার সাথে পালনে অভ্যস্ত হতে হবে। সেই সাথে নফল ইবাদাতের প্রতিও গুরুত্ব দিবে। এতে তোমার পড়ায় অনেক বরকত আসবে। শুধুমাত্র পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক সময়টুকুতেই নয়, বরং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর কাছে অনেক বেশী করে সাহায্য চাইবে। তোমাদের পড়াশুনা যাতে আরো পরিকল্পনামাফিক এবং গোছানো হয় সেজন্য তোমাদের কিছু পরামর্শ দেয়া হল:
তোমার লক্ষ্যকে আগে স্থির করে নাও।
তোমার লক্ষ্যের পথে ছুটে চলার জন্য তুমি একটি ভালো কোচিং এ ভর্তি হতে পার।
কোচিং ক্লাসগুলো ঠিকভাবে করবে এবং কোচিং এর পরীক্ষাগুলো ঠিকভাবে দেয়ার চেষ্টা করবে।
কোচিং এ ভালো নাম্বার পাওয়ার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তোমার প্রস্তুতি যথার্থ ছিল কিনা এবং পরীক্ষাটি সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় দিয়েছ কিনা।
বাসায় পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় গুলো দিয়ে শুরু করবে।
অনেকক্ষণ পড়ার কারণে যদি একঘেঁয়েমি লেগে যায়, তখন ঘড়ি ধরে ২-৩টা পরীক্ষা দিয়ে ফেলবে। এতে অনেক উপকার পাবে। পড়ায় Serious ভাব চলে আসবে; কোনটা গুরুত্বপূর্ণ আর কোনটা গুরুত্বপূর্ণ নয় সেটাও বুঝে নিতে পারবে।
পুরনো পড়াগুলো বার বার ঝালাই করে নিবে।
কোচিং ক্লাসে যাওয়ার সময় পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাসে যাবে। কারণ অনেক সময় অনেক টপিক অনেক দ্রুত পড়ায়। ক্লাসে যদি বুঝতে না পারো তাহলে ক্লাসের সময়টা তোমার বৃথা যাবে।
বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করার চেষ্টা করবে।
নিয়মিত ভাবে প্রতিটি বিষয় অধ্যয়ন করা।
বার বার পড়াগুলো ঝালিয়ে নেয়া।
যে কোন বিষয়ের Hard question দেখে কখনো ঘাবড়াবে না। কিছু Hard question পরীক্ষায় আসে। কিন্তু এগুলো Answer না করেও ভালো পজিশন পাওয়া সম্ভব।
কখনই হতাশ হওয়া যাবে না। অনেকেই হয়ত অনেক কিছু পারে, সেটা তুমি পারনা। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
পরীক্ষার হলে ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দেয়াটা খুব জরুরী। কোন প্রশ্নের উত্তর না পারলে সেটা skip করে যাবে। অযথাই এর পেছনে সময় নষ্ট করার দরকার নেই। এক্ষেত্রে তোমাকে এই চিন্তাটা সহযোগীতা করবে- তুমি যা পারোনা, আর কেউ সেটা পারে না।
শুধু পড়াশোনা করলেই চলবে না, তোমাকে তোমার শরীরের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে।
রাত জেগে পড়াশোনা করায় অভ্যস্থ না হওয়াই ভালো। এতে তোমার স্বাস্থ্য নষ্ট হবে এবং নামাযে সমস্যা হবে।
পুষ্টিকর এবং গ্লুকোজযুক্ত খাবার খেতে হবে।
“ক ইউনিট”
“ক” ইউনিটের জন্য পড়তে হবে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, গণিত।
– পদার্থ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে problem solve এর দিকে বেশী মনোযোগী হতে হবে। লেখচিত্রের
ছোট ছোট problem গুলোও দেখতে হবে। বড় problem গুলোর বেলায় যতোটা সম্ভব
shortcut এ করার চেষ্টা করতে হবে। আর এজন্য সূত্র গুলো খুব ভালোভাবে আয়ত্বে
থাকতে হবে। প্রতিটা রাশির একক ভালো করে মুখস্থ রাখতে হবে। বইয়ের যেসব সংজ্ঞা আছে
সেসব মুখস্থ করতে হবে।
– রসায়ন ১ম পত্রের জন্য mathematical problem গুলো ভালো করে পড়তে হবে।
একক গুলো জানার পাশাপাশি ছোট-বড় সব সংকেত পড়তে হবে। বিশেষ করে জারনবিজারনের ক্ষেত্রে কার জারন মান কত সেগুলো জানা থাকতে হবে। ছবি এবং লেখচিত্রের প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে।
– রসায়ন ২য় পত্রের জন্য বিক্রিয়াগুলো পড়তে হবে। বিক্রিয়া সম্পূর্ন হওয়ার ক্ষেত্রে কি ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলোও জানতে হবে। কোন যৌগ কি বর্ণের বা কি বর্ণের অধঃক্ষেপ দেয় সেগুলোও পড়তে হবে। কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কি উৎপাদন করা যায় এগুলো বেশি করে পড়তে হবে।
– গণিতের ক্ষেত্রে Mathematical short term গুলো জানতে হবে, যাতে সহজে
Answer করা যায়। Problem গুলোও shortcut এ করার চেষ্টা করতে হবে। শুধু calculator দিয়েই বেশির ভাগ math কেও ফেলার চেষ্টা করা। এজন্য calculator
বিষয়ভিত্তিক
ব্যবহারে দক্ষ হতে হবে। প্রতিটি সূত্র আয়ত্বে থাকতে হবে।
– বিগত বছরের গণিত প্রশড়বগুলো বেশী কেও Study করতে হবে।
– ঐচ্ছিক বিষয় বাদ দিয়ে বাংলা অথবা ইংরেজি Answer করা যেতে পারে। তবে সেটা না
করাই ভালো।
– জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কোন বিজ্ঞানী কি আবিষ্কার করেছেন এবং আবিষ্কারের সাল বেশি
করে পড়তে হবে। উদ্ভিদ ও প্রাণীদেও বৈজ্ঞানিক নামগুলো বানানসহ পড়তে হবে।
ইফ্ফাত আরা সোনিয়া
ফিজিক্স, ৩য় বর্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
“খ ইউনিট”
“খ” ইউনিটের জন্য পড়তে হবে বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান।
– অন্য বিষয়গুলোর মত বাংলাকে সমান গুরুত্ব দিয়ে অধ্যয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিকের বোর্ড বই এবং ব্যাকরণ বইটি মনোযোগের সাথে অধ্যয়ন করতে হবে। এর পাশাপাশি সহায়ক বইও পড়তে হবে ভালো করার জন্য।
– ইংরেজীঃ বইয়ের যে কবিতাগুলো রয়েছে, সেগুলো বেশী করে পড়তে হবে এবং আয়ত্ব করতে হবে। প্রচুর অধ্যয়ন করতে হবে। সেই সাথে এর উপর দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
– সাধারণ জ্ঞান এ যেহেতু সবচেয়ে বেশি নম্বর থাকে, এই বিষয়টিতে অধিক পড়াশুনা করতে হবে। বই পড়ার পাশাপাশি সাম্প্রতিক বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। নিয়মিত কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এবং পত্রিকা পড়তে হবে।
– বাংলা, ইংরেজী ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের উপর বাজারে প্রচুর বই কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলোও অধ্যয়ন করতে হবে।
আক্তার বানু আশা
ইকোনমিক্স, ৪র্থ বর্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
“গ ইউনিট”
“গ” ইউনিটের জন্য তোমাকে পড়তে হবে বাংলা, ইংরেজি, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ।
– -বাংলা, ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ এ অনেক মার্কস উঠাতে হবে। কারণ এই দুটো বিষয়ে একটু চেষ্টা করলেই অনেক ভাল ফল পাওয়া যায়।
– -বাংলার জন্য বোর্ড বই, নাটক, উপন্যাস; ব্যাকরণের জন্য মাধ্যমিক বোর্ড বই
এবং শিক্ষকেরা যেসব বই এর কথা বলেন সেগুলো পড়তে হবে।
– -ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগের জন্য উচ্চ মাধ্যমিকের পড়া বই ও পত্রিকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পাতা সম্পর্কে নিয়মিত ধারণা নিতে হবে।
– -ইংরেজির প্রশ্ন তুলনামূলক কঠিন হয়ে থাকে। তাই এর প্রতি অধিক গুরুত্ব দিবে। ইংরেজিতে
নুন্যতম ১২ পেতে হবে।
– হিসাববিজ্ঞানের জন্য জাবেদা ও সমন্বয় দুটোই পড়বে। পরীক্ষায় অনেক ছোট ছোট সমন্বয় আসে। এই সমন্বয় গুলো অল্প সময়ে কিভাবে দ্রুত করা যায় সেই কৌশল আয়ত্ত্ব করে নিবে।
কাজী সাদিয়া হাসিন
হিসাববিজ্ঞান, ৪র্থ বর্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়