পারস্পরিক সম্পর্কের সৌন্দর্য ও সীমা

Posted in বিষয়ভিত্তিক on May 31, 2015 by

ইসলাম এক পরিপূর্ণ সামষ্টিক শক্তির নাম- যতখানি বাহ্যিক ততখানি আভ্যন্তরীন। আভ্যন্তরীণ এ শক্তিকে উখুয়াত বা ভ্রাতৃত্ব, ‘জামিয়া’ বা ঐক্যবদ্ধ এমন কিছু সুন্দর পরিভাষায় এ… করা হয়েছে।

“মুমিনরা পরস্পরের ভাই”। (হুজরাত-১০) পারস্পরিক সম্পর্কের এই ভিত্তি ইসলামী আন্দোলনের চরিত্রকে তুলে ধরে। এ কারণেই মুমিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক এক ধরনের স্থিতি, গভীরতা ও ব্যাপকতা পেয়ে থাকে। কাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি হবে, তার রূপ-ধরণ তথা সৌন্দর্য ও সীমা কেমন হবে এর পুরো নির্দেশনা আমরা আল্লাহর বাণী ও সীরাত হতে পেয়ে থাকি। মূলতঃ ইসলামের বিধি-বিধান, শরিয়ত নির্দেশনা বা আইন যাই বলা হোক না কেন সবক্ষেত্রেই আবেগ ও বাস্তবতার পূর্ণ মিলন ঘটেছে। যার পরিণতি স্বস্থি ও প্রশান্তির কারণ হয়ে থাকে। মুমিনদের সম্পর্ক কাদের ঘিরে তৈরি হবে তার নির্দেশনা কোরআনে এভাবেই এসেছে- “তোমাদের বন্ধু তো সত্যিকার অর্থে আল্লাহ তার রাসূল এবং ঐসব ঈমানদার যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং খোদার সামনে মাথা অবনতকারী।

এভাবেই ঈমানদাররা প্রকৃত বন্ধু বাছাই করবে। বন্ধুত্বের এ সম্পর্ক কোন বাহ্যিক সম্পর্ক নয়। দুনিয়াবী লেন-দেন, আদান-প্রদানে সীমাবদ্ধ নয়। এই সম্পর্ক আদর্শিক সম্পর্ক। তাই তার ধরনও ভিন্ন হয়ে থাকে- অনেক মজবুত এবং আল্লাহর রহমত দ্বারা পরিপূর্ণ।

“তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর এবং কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নেই নেয়ামতের কথা স্মরণ করো যখন তোমরা একে অপরের দুশমন ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তাআলা (তার দ্বীনের বন্ধন দিয়ে) তোমাদেরকে একের জন্য অপরের অন্তরে ভালবাসা সঞ্চার করে দিলেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহে “ভাই ভাই” হয়ে গেলে। অথচ তোমরা ছিলে অগ্নিকুণ্ডের প্রান্ত সীমানায়। অতঃপর সেখান থেকে আল্লাহ তাআলা তোমাদের উদ্ধার করলেন; আল্লাহ তাআলা এভাবেই তার নিদর্শনসমূহ তোমাদের কাছে স্পষ্ট করেন, যাতে করে তোমরা সঠিক পথের সন্ধান পাও।” (আলে ইমরান- ১০৩)

এই আদর্শিক সম্পর্ক ছাড়াও পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক মুমিনদের রক্ষা করতে হয়। ইসলাম তাকেও দ্বীনের সীমায় অন্তর্ভুক্ত করে আরো বেশি সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে। ইসলামী জীবন-বিধান যেহেতু এই সম্পর্ক ঘিরেই তৈরি তাই একে ইসলামের বুনিয়াদি কাজ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। পৃথিবীতে যে মানুষ আল্লাহকে বিশ্বাস করে না তাকেও এমন কিছু সম্পর্ক রক্ষা করতে হয়। তবে মুমিন ও দুনিয়াবী এ সম্পর্কের পার্থক্য হল হীরা ও কাঁচের মত। দুটি জিনিস সাদৃশ্য হলেও সমান হয় না।

পারস্পরিক সম্পর্কের সৌন্দর্য

মূলতঃ ইসলামে পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্ব, এর সৌন্দর্য ও সীমার মধ্যে নিহিত। তাই সম্পর্কের নির্দেশনা ও গুরুত্ব না বলে এর সৌন্দর্যের দিকটি তুলে ধরা হল। এ ব্যাপারে কোরআন হাদীসের নির্দেশনাই আমরা জানব।

ইনসাফের পূর্ণ প্রকাশ

শুধু সম্পর্ক রক্ষা করা নয় বরং পূর্ণ ইনসাফ সহকারে সম্পর্ক রক্ষা করা জরুরী। ইসলাম যেমন ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছে তার নমুনা অন্য কোন ব্যবস্থায় খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আল্লাহর নির্দেশ হলঃ

“আপনি বলুন, এসো আমি তোমাদেরকে তোমার প্রতিপালক যেসব জিনিস হারাম করেছেন তা পাঠ করে শুনাই। সেগুলো হচ্ছে আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না, পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো, নিজ সন্তানদের অভাবের কারণে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে এবং তাদের রিযিক দেই। প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার কাছেও যেও না। যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন তাকে হত্যা করো না। তবে ন্যায়সঙ্গতভাবে করতে পারো। তোমাদের এ নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যেন তোমরা হৃদয়ঙ্গম করতে পারো। ইয়াতিমের সম্পদের কাছেও যেও না, তবে বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত উত্তম পন্থায় তাদের সম্পদ হেফাজত করা)। ন্যায় ও ইনসাফ সহকারে ওজন ও মাপ পূর্ণ কর। তোমাদেরকে আল্লাহ এ নির্দেশ দিয়েছেন যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।” (আন আম- ১৫২-১৫৩)

পিতামাতা ও সন্তানের প্রতি সুবিচার, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অন্যায়ের কাছে না যাওয়া, ন্যায় ও ইনসাফের কিছু নির্দেশ এখানে দেয়া হয়েছে। একটা মানুষ কিছু কিনতে গেলে যেমন সঠিক পরিমাপ করে আনে, তেমনি এখানে পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইনসাফের ঠিক ঠিক পরিমাপ করা হয়েছে। এটাই ইসলামের সৌন্দর্য যা অনেক শক্তিশালীও হয়ে থাকে।

আবু জেহেল এক ইয়াতীমের সম্পত্তি আ্তসাৎ করায় ছেলেটি আল্লাহর রাসূলের কাছে বিচার নিয়ে আসে। তিনি সেই ছেলেটিকে নিয়ে আবু জেহেলের কাছে যান এবং সম্পত্তি ফিরিয়ে দিতে বলেন। কোন প্রতিবাদ ছাড়াই দ্রুত সে তা ফিরিয়ে দেয়। এতে আবু জেহেলের সাথীরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে- “কেন সে এভাবে মুহাম্মাদের কথা মেনে নিল। আবু জেহেল বলল, “আমার মনে হচ্ছিল মুহাম্মাদের দুই পাশে বিশাল ভয়ঙ্কর দুটি সাপ আমাকে খেয়ে ফেলবে। তাই দ্রুত সম্পদগুলো ফিরিয়ে দিলাম।”

হাদীসে দু’সন্তানের মধ্যে একজনের চাইতে আর এক জনকে বেশি ভালবাসতেও নিষেধ করা হয়েছে। পিতা-মাতা, প্রতিবেশি, আ্তীয়, মুমিন ভাই- এমন প্রতিটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমন সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেখানে ইনসাফের কোন কমতি নেই। আবার কেউ যদি এ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইনসাফ নষ্ট করে তবে শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে মাফ চাইলেই তিনি মাফ করবেন না। বরং সংশ্লিস্ট ব্যক্তি যদি মাফ করেন তবেই তিনি মাফ করবেন।

পারস্পরিক ভালবাসা যেমন থাকতে হবে, ইনসাফও থাকতে হবে। অন্যকে বঞ্চিত করে নিজের আপনজন বলেই কাউকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। আমার সাথে অন্যায় হয়েছে বলে কারো সাথে অন্যায় করা বা আমাকে অধিকার হতে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে তার প্রতি আমি দায়িত্ব পালন করব না- এটা ইসলামের সৌন্দর্যের বহির্ভূত। যে বুড়ি আল্লাহর রাসূলের পথে প্রতিদিন কাঁটা দিত তিনি তার অসুস্থতায় তাকে দেখতে যান। যারা তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে তিনি সে সময়ও তাদের আমানত ফিরিয়ে দিয়ে যান। এ কারণেই কাফেররা যুদ্ধের ময়দানে এ ….. বিরুদ্ধে তারা অস্ত্র ধারণ করছে?” এমন চিন্তায় আচ্ছন্ন থাকে এবং যুদ্ধের ফলাফলের পূর্বেই নৈতিকভাবে পরাজয়বরণ করে।

সঠিক ভারসাম্যপূর্ণ মানদণ্ড প্রদান

ইসলামে পারস্পরিক সম্পর্কের আর একটি দিক হল সঠিক মানদণ্ড প্রদান। যেন তা সমাজে যথাযথ ভারসাম্য রক্ষা করে। মানুষ এর মাধ্যমে সহজেই বুঝতে পারে তার আচরণ ঠিক হল কিনা।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেন, তোমাদের কেউ সেই পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যে পর্যন্ত না সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, তা নিজের ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করে। (বোখারী ও মুসলিম)

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেছেন, তোমরা পরস্পর হিংসা বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরের দামের মূল্য বৃদ্ধি করো না; ঘৃণা ও বৈরীভাব পোষণ করো না, শত্রুতা করো না, একজন আর একজনের বিক্রির উপর বিক্রি করো না, তোমরা আল্লাহর বান্দারা ভাই হয়ে যাও। মুসলমান, মুসলমানের ভাই। এক মুসলিম ভাই আর এক মুসলিম ভাইয়ের উপর যুলুম করো না। অন্য ভাইকে ঘৃণা ও লাঞ্ছিত করবে না। তাকওয়া হচ্ছে এখানে, একথা বলে তিনি তিনবার ইঙ্গিত করেন। কোন মুসলমান ভাইয়ের খারাপ হওয়ার জন্য অন্য মুসলমান ভাইকে ঘৃণা করাই যথেষ্ট। সকল মুসলমানের জন্য অপর মুসলমান ভাইয়ের জান-মাল ও ইজ্জত হারাম করা হয়েছে।” (মুসলিম)

অদ্ভুত সুন্দর দুটি মানদণ্ড এখানে রয়েছে,

প্রথমতঃ নিজের জন্য যেমন চাইব, অন্যের জন্যও তা চাইতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ তাকওয়া অর্থাৎ আল্লাহর ভয় সহকারে এ সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে।

একটা বাচ্চা কিংবা একজন পূর্ণবয়স্ক শিক্ষিত লোক যাকেই বলা হোকনা কেন, যদি পছন্দ করতে বলা হয় তবে তুলনামূলক ভাল জিনিসটি নিজের জন্য পছন্দ করবে। এটাই বর্তমান সমাজের স্বাভাবিক চিত্র। কিন্তু ইসলামের মানদণ্ড তা হতে ভিন্ন। আমি একজন বোন হিসেবে যা পেতে চাই আমার বোনকেও তাই দেব। প্রতিবেশি হিসেবে যেমন আশা করি, আমার প্রতিবেশির প্রতিও তেমন হব। আমার মুমিন ভাইয়ের প্রতি যা কামনা করব, তাদের প্রতিও তেমন হব এটাই ইসলামের বিধান। আর এর সাথে সমন্বয় থাকতে হবে তাকওয়া। তাকওয়া এই মানদণ্ডকে সৌন্দর্য প্রদান করে। তাইতো আবু তালহা (রাঃ)র ঘরে যখন মাত্র একজনের খাবার ছিল, তিনি নিজের বাচ্চাদের না খাইয়ে, নিজে না খেয়ে অভাবী মুসাফিরকে খাবার প্রদানকে প্রাধান্য দেন। আয়েশা (রাঃ) দুহাত ভরে দান করে ঘরে এসে দেখেন ইফতারের জন্য কিছুই নেই। এর চাইতে সর্বোত্তম মানদণ্ড আর কি হতে পারে।

মানবিকতার বিকাশ

কিছুদিন আগেও টিভিতে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কিছু বিজ্ঞাপন দেখা যেত (একটি পত্রিকার) যেখানে বাসে মহিলা সীট খালি করতে বলা হলে কটুক্তি করা হয়। এমন অনেক দৃশ্যই আমরা দেখে থাকি। পারস্পরিক মতবিরোধের কারণে সম্পর্ক ছিন্ন করা, কথা না বলা, রাগের বসে অধীনদের সাথে খারাপ ব্যবহার আরো কতোকিছু। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানবিক অবস্থানের বিকাশ ঘটায়। যেখানে এসবের কোন সুযোগ নেই।

সা’দ আহমদ এবং অন্যান্যরা আবদুল্লাহ ইবনে রফি হতে বর্ণনা করেন, “তৃতীয় খলীফা হযরত ওসমান (রাঃ) রাতে নিজেই ওযুর পানি তুলতেন। যখন তাকে বলা হল আপনি চাকরদের দিয়ে পানি সংগ্রহ করলেই তো হতো। তিনি উত্তরে বললেন না, রাত তাদের জন্য এখন তারা বিশ্রাম নেবে।

হযরত আবু বকর (রাঃ) খলিফা হবার আগে পশুর দুধ দোহন করতেন। খলিফা হিসেবে বাইয়াত গ্রহণের পর একটি মেয়ে বলল, এখন আর আমার দুগ্ধবতী পশু দোহন করা হবেনা। হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেন, শপথ করে বলছি আমি তোমার দুধ দোহন করতে হবে। আগে আমি মানুষের যে সেবা করেছি, খলিফা হওয়ার পর তাতে কোন পরিবর্তন হবেনা।

এমন মানবিকতা ইসলামে পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিকাশ ঘটায় যা অন্য কোন পদ্ধতিতে বা সচেতনতামূলক উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। আমরা হয়ত আন্দোলনের কর্মী হিসেবে সম্পর্ক ছিন্ন করি না। কিন্তু নিজের অনেক ব্যস্ততার ও অন্যের প্রয়োজন খেয়াল রাখা কিংবা নিজে কষ্ট স্বীকার করে অন্যের সুবিধা করে দেয়ার মত সম্পর্কের চিত্র খুব কমই দেখা যায়। এমন মানবিকতাই ইসলামে কাম্য। আল্লাহরই দান এবং তা কোন কিছু দিয়ে কেনা যায়না।

“আল্লাহ তাদের অন্তরে ভালবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন আপনি যদি জমীনে যা সম্পদ আছে, সব কিছু খরচ করতেন তথাপি তাদের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি করতে পারবেন না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী ও বিজ্ঞ।” (সূরা আনফাল- ৬৩)

বাহ্যিক অভ্যন্তরীণ উভয় দুর্বলতা ত্রুটি সংশোধন

পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুটো দিকই মানুষের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন অভ্যন্তরীণ দিক হিসেবে- বেশি বেশি অনুমান করা, হিংসা, অংহকার, রাগ ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়ে কোরআন ও হাদীসে সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। প্রকাশ্যভাবে মানুষ কথা দিয়ে অন্যের প্রতি যে অন্যায় করে যেমন গীবত করা, ওয়াদা ভঙ্গ করা, অভিশাপ দেয়া, মিথ্যা বলা ইত্যাদির প্রতিও কঠোর নির্দেশনা এসেছে।

আবার বিভিন্ন কার্যক্রম ও আচরণের মাধ্যমেও অন্যায় হবার সম্ভাবনা থাকে। যেমনঃ যুলুম করা, ধোঁকা দেয়া, অধিকার নষ্ট করা, কষ্ট দেয়া, মুনাফেকী আচরণ, আ্তসাৎ, অপবাদ দেয়া ইত্যাদি। ইসলাম প্রতিটা বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার হুকুম দিয়েছে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে-

“আর আমি আদেশ করছি যে আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী শাসন করুন ও ফায়সালা দিন। তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন যেন তারা আপনাকে এমন কোন নির্দেশ হতে বিচ্যুত না করে যা আল্লাহ আপনার প্রতি নাযিল করেছেন। তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখুন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের গুনাহের শাস্তি দিতেই চেয়েছেন, মানুষের মধ্যে অনেকেই নাফরমান আছে।” (মায়িদা- ৪৯)

সুতরাং লক্ষ্য রাখতে হবে, আমার বোনের প্রতিটা বিষয় আমার জন্য আমানত। কখনো কারো প্রতি বিরক্ত হয়ে তার সম্পর্কে খারাপ অনুমান যেন চলে না আসে। একটা মানুষের কিছু দোষ সমাজে ছড়িয়ে পড়বে এমন পরিবেশ তৈরি করা যাবে না বরং গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে আল্লাহর জন্য। সামষ্টিক পরিবেশের ত্রুটিগুলো আমাকে পিছিয়ে দেবে না বরং তার সংশোধনকারী হিসেবে আমি সামনে আগাবো। কারো মতের সাথে আমার মিল না হলেও সুবিধা পাবে এবং অন্যের সাথে বিরোধ হলেও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে হয় এমনই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের আচরণ হতে হবে।

সুস্থ সংস্কৃতি-শিষ্টাচারের বিকাশ সাধন

ইসলাম সামাজিক পরিবেশে এমন কিছু সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা তৈরি করে দিয়েছে যা শিষ্টাচারের সর্বোত্তম নমুনা। বর্তমান পরিবেশে বড় পরিচার বা যৌথ পরিবারে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখা কষ্টকর হয়ে যায়। মানুষ মেহমানদারিতে বেশ বিরক্ত থাকে, পিতা-মাতা বৃদ্ধ অবস্থায় নিজেকে অসহায় মনে করে। নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকাই মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড়দের কথার উপর জবাব দেয়া স্বাবাভিক বিষয় হয়ে গেছে। এমনকি নিশ্চিন্তে কেউ কারো কাছে সাহায্যের জন্য দাবী করার সাহস পর্যন্ত পায় না। এর বিপরীতে ইসলামের স্বরুপ হলঃ

“তাদের দ’জনের (পিতা-মাতার) জন্য দয়া ও বিনয়ের বাহু অবনত করো। (বনী ইসরাইল- ২৪)

বিরক্তির প্রকাশ “উহ” শব্দটা পর্যন্ত করা যাবে না। তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোআ করতে বলা হয়েছে।

উম্মু কুলসুম বিনতে ওকবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সঃ) বলেছেনঃ উত্তম দান-সাদকাহ হচ্ছে, মনে শত্রুতা পোষণকারী আ্তীয়ের প্রতি দান করা।” (তাবরানি, ইবনু মাজাহ)

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে সে যেন নিজ প্রতিবেশিকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে সে যেন নিজ মেহমানের সম্মান করে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস করে, সে যেন কথা বললে ভাল কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে। (বোখারী ও মুসলিম)

প্রতিবেশিকে দেয়ার জন্য তরকারীতে ঝোলও বেশি করে দিতে বলা হয়েছে। এমন সব সুন্দর সমাজ ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হওয়াই ইসলামের শিক্ষা।

আমরা বিভিন্ন পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে উঠি। হয়ত কারো প্রতি দাবী অনেক বেশি থাকে আবার কারোর প্রতি কম থাকে। কিন্তু আল্লাহর একজন কর্মী সব সময় তার মানদণ্ড বজায় রাখবে, বিশ্রামপ্রিয় হওয়া, সম্পর্কের দাবী পূরণের উদাসীন হওয়া, প্রয়োজন না থাকলে পরিবারের কাজে সময় না দেয়া। ভাইবোন, আ্তীয়ের প্রতি কম দায়-দায়িত্ববোধ সম্পন্ন হওয়া, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা, অন্যান্য দ্বীনি বোনের প্রয়োজন ও অসুবিধাকে বুঝতে না পারা বা খেয়াল না করা- এমন আচরণ হতে বিরত থাকতে হবে।

ইমাম মা…… বলেছেন, ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল তার ভাইকে ও যারা বড় তাদের খুব সম্মান করতেন। একবার তার কাছে আবু হাম্মাম গাধায় আরোহন করে আসেন এবং তিনি গাধার লাগাম ধরে তাকে নামান। তিনি তার চাইতে বড় অন্যান্যদের সাথেও এমন আচরণ করতেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে কোন শিষ্টাচার শরীয়তের নীতির পরিপন্থি যেন না হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েই তার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। সমাজ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। বিভিন্ন আইন হয়েছে। সংসদে সম্প্রতি একটি আইনও পাশ হয় যেখানে বলা হয় বৃদ্ধ পিতামাতার এমন সম্পর্ক তৈরি করতে পারেনি।

প্রয়োজন মর্যাদা সংরক্ষণ

ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সন্তানকে নিতে হবে।

পারস্পরিক সম্পর্কের মর্যাদা সংরক্ষণ ও প্রয়োজন পূরণ ইসলামী জীবনবোধে এর একটি অসাধারণ দিক। সামষ্টিক কোন তৎপরতার এটা এতটাই জরুরী যে অনেক সুন্দর লক্ষ, উপযুক্ত কর্মসূচী ও প্রয়োজনীয় উপায় উপকরণ থাকলেও এর অভাবে তা ভেঙ্গে পড়ে। আবার একটি সামাজিক পরিবেশও বিশৃক্মখল হয়ে উঠে এর অভাবে। এ ধরনের বিষয়ের প্রতি ইসলামের নির্দেশনা খুবই সচেতনতামূলক ও গুরুত্ববহনকারী। এ ক্ষেত্রে সূরা হুজরাতের কিছু আয়াত তুলে ধরলে আমরা ইসলামের সৌন্দর্যের এ দিকটা বুঝতে পারব।

“হে  নবী! যেসব লোক তোমাকে হুজরাগুলির বাহির হতে ডাকাডাকি করে তাদের মধ্যে অধিাকাংশই নির্বোধ। তোমার বের হয়ে আসা পর্যন্ত তারা যদি ধৈর্য্য ধারণ করত তবে তা তাদের জন্যই ভালো ছিল। আল্লাহ তো ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (হুজরাত- ৪-৫)

“হে ঈমানদার লোকেরা! না কোন পুরুষ অপর পুরুষের বিদ্রুপ করবে- হতে পারে সে তাদের তুলনায় ভালো। আর না কোন মহিলা অন্য মহিলাদের বিদ্রুপ করবে, হতে পারে সে তাদের অপেক্ষা উত্তম। (তোমরা) নিজেদের মধ্যে একজন অপরজনকে অভিশাপ দিবে না এবং খারাপ নামে ডাকবে না। ঈমান গ্রহণের পর ফাসেকী কাজে লিপ্ত হওয়া খারাপ কাজ। যারা এমন আচরণ থেকে বিরত না থাকলে তারাই জালেম। (হুজরাত- ১০)

“আল্লাহ মন্দ কথা প্রকাশ করা ভালবাসেন না। তবে কারো উপরে জুলুম করা হয়ে থাকলে (অন্য) কথা। জেনে রেখো আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন। (সূরা নিসা- ১৪৮)

এভাবে অন্যের প্রয়োজন পূরণ ও মর্যাদা সংরক্ষণের বিষয়ে বলা হয়েছে। কারো দুর্বলতা প্রকাশ না করার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের কোন কথা বা আচরণ দ্বারা যেন কেউ কষ্ট না পায়। কারো ভুলত্রুটি প্রকাশ পেয়ে গেলেও নমনীয় থাকতে হবে। তবে ইসলামে মৌলিক বিধানে কোন ছাড় দেয়া যাবেনা। কারো চাইতে কাউকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এমন কিছু যেনো আচরণ প্রকাশ না পায়। প্রত্যেকের মতামত ও চিন্তা আমার কাছে গুরুত্ব পাবে যদিও তার সব সময় সবটা গ্রহণ নাও করা সম্ভব হয়। অন্যের প্রতি সহনশীলতা বজায় রাখা এমনকি বিতর্কের ক্ষেত্রেও। পারস্পরিক প্রয়োজন বুঝতে পারলে এবং মর্যাদা সংরক্ষণ করতে পারলে অনেক ত্রুটিপূর্ণ ব্যক্তি সংশোধন হয়ে যেতে পারে। এটা সামাজিক রুচিবোধের প্রকাশ।

কল্যাণকর কাজের বিস্তার লাভ

পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে কল্যাণকর তৎপরতা ও অভ্যাস বিস্তার লাভ করা এক ধরনের সৌন্দর্য।

আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সঃ) বলেছেন, এক মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছে। ১. কোন মুসলিম অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবা করা। ২. মৃত্যুবরণ করলে দাফন কাফনে উপস্থিত হওয়া ৩. দাওয়াত দিলে গ্রহণ করা ৪. সাক্ষাত হলে সালাম দেয়া ৫. হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা ৬. উপস্থিত বা অনুপস্থিত সকল অবস্থায় মঙ্গল কামনা করা। (নাসায়ী, বুখারী)

এসব বিষয় অভ্যন্তরীণ মজবুতী তৈরি ও কল্যাণকামী হবার জন্য দরকার আমার কোন বোন অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া ও সেবা করা, আমার প্রতি তার হক, পরস্পর পরস্পরের প্রতি দোআ করা, সুখের সময় ও বিপদের সময় পাশে থাকা আমার দায়-দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। ইসলাম কখনই আ্তকেন্দ্রিকতাকে সমর্থন করে না। আমাদের সম্পর্ক শুধু “ফরমাল” সম্পর্ক হবে না এখানে সেটাই বুঝানো হয়েছে। এছাড়া শুধু সম্পর্ক রক্ষায় ইসলামের কোন সৌন্দর্য নেই।

ব্যক্তিত্ব আবেগের প্রকাশ

আল্লাহর জন্য যে সম্পর্ক সেখানে ব্যক্তিত্ব ও আবেগের সঠিক অবস্থান থাকতে হবে। অন্যরা তার সাথে মেলামেশা করলেই তা বুঝতে পারবে। মুমিন অহেতুক কথা বলা, বিতর্ক করা, কুটিলতা ও জটিলতা থাকবে, আবার নিজ ভাইয়ের প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশও থাকবে তার আচরণে।

“রহমানের আসল বান্দাতো তারাই যারা জমীনে বিনয়ের সাথে চলে। আর জাহেল লোকের তাদের সাথে কথা বলতে আসলে তারা বলে, তোমাদেরকে সালাম। (ফুরকান- ৬৩)

“(রহমানের বান্দাতো তারাই) যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না, আর অর্থহীন কোন বিষয়ের নিকট দিয়ে অতিক্রমকালে শরীফ মানুষেরা তা এড়িয়ে চলে।” (সূরা আল ফুরকান- ৭৪)

মুমিনদের আচরণ ভারসাম্যপূর্ণ আবেগও থাকবে। রাসূল (সঃ) একবার মসজিদের ভিতর বসেছিলেন। সেখানে একজন লোক আসলে তিনি নড়েচড়ে বসেন। তিনি বললেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ যথেষ্ট জায়গা আছে,” তিনি বললেন “মুসলমানের হক হচ্ছে এই যে তার ভাই যখন তাকে দেখবে তার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠবে।” (বায়হাকী)

যায়িদ ইবনে হারিস (রাঃ) যখন মদিনা হতে আসেন তখন রাসূল (সঃ) চাদর না পরে তা টানতে টানতে দ্রুত দরজায় চলে আসেন তাকে মোলাকাত করার জন্য। আবার জাফর তাইমিয়া (রাঃ) আবিসিনিয়া হতে আসলে রাসূল (সঃ) তাকে জড়িয়ে ধরেন। আবেগের এমন সমন্বয় ইসলামী আন্দোলনের সফলতার মূলমন্ত্র।

নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা

এখানে প্রত্যেকেই পরস্পরের ব্যাপারে নিজেকে নিরাপদ মনে করবে। অধিকারের ব্যাপারে যেমন নিরাপদ থাকবে তেমনি হক আদায়ের ব্যাপারেও। কেউ আমাকে গোপন বিষয় বলে এতটুকু যেন নিরাপদ থাকতে পারে যে, তার গোপন বিষয়ের আমানতদার পাবে। এখানে ইয়াতিম তার সম্পদের জন্য নিরাপদ থাকবে, মজুরও নিশ্চিন্ত থাকবে তার মজুরীর ব্যাপারে। পিতা-মাতাও বৃদ্ধাবস্থায় নিজের অবস্থানকে অনিশ্চিত মনে করবে না।

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সঃ) বলেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোন মোমিন মুসলমানদের একটি বিপদ দূর করে আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার একটি বিপদ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন দুঃখির দুঃখ কষ্ট দূর করে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও পরকালের দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন করে আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন। আল্লাহ বান্দাকে সেই পর্যন্ত সাহায্য করতে থাকেন, যে পর্যন্ত বান্দা নিজ ভাইয়ের সাহায্য করে।” (মুসলিম)

এভাবেই মুসলমানদের ভিতর নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক প্রত্যেকের প্রতি নিশ্চিন্ত থাকতে পারে।

অধিকার দায়-দায়িত্বকে অনুগ্রহ হতে আলাদা …. হয়েছে

আল্লাহর কোরআন ও হাদীসের যেখানেই নির্দেশনা এসেছে সেখানেই একে হক রক্ষা করা, ইবাদাত বা সদকাহ বলা হয়েছে। পিতা-মাতা, আ্তীয়, প্রতিবেশি প্রত্যেকের অধিকার রক্ষা করাই হক। ভাল কথা, আচরণ ও কল্যাণের কাজসমূহই সদকাহ। প্রতিটা ভাল কাজই ইবাদত। সুতরাং পারস্পরিক সম্পর্কের এ বিষয়গুলোকে মানুষ তার নিজের অনুগ্রহ বলতে পারবে না।

“আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই (আল্লাহর) মহব্বতে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম মিসকীন মুসাফির, ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসের জন্য। (সূরা বাকারা- ১৭৭)

“যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করে, তারা নিজ পেটসমূহে আগুন হজম করে এবং শিঘ্রই তারা দোযখে প্রবেশ করবে।” (সূরা নিসা- ১০)

বনী ইসরাইলে বলা হয়েছে- “আপনি বলুন, হে রব! তারা আমাকে ছোটকালে যেভাবে লালন-পালন করেছে অনুরূপভাবে আপনিও তাদের দু’জনের উপর রহম করুন।”

সুতরাং যারা অসহায়ের জন্য ও যারা সাহায্য প্রার্থী তাদের জন্য এগিয়ে আসাকে কর্তব্য বলা হয়েছে, অনুগ্রহ নয়। এভাবে ইসলাম পারস্পরিক সম্পর্ক আরো বেশি সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে।

পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষার সীমা:কিছু সীমাও আল্লাহপাক নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

বুনিয়াদী আদর্শ সংরক্ষণ

মানুষ প্রতিটা সম্পর্ক আল্লাহর জন্যই গড়ে তুলবে। তাই এই সম্পর্ক ততক্ষণ পর্যন্ত সংরক্ষিত হবে যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ এর মাধ্যমে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করবে। মহান আল্লাহ বলেনঃ

“(এরা সেসব লোক) যারা আল্লাহর সাথে (আনুগত্যের) চুক্তি মেনে চলে এবং কখনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে না এবং আল্লাহ তাআলা যেসব মানবীয় সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে বলেছেন তা অক্ষুণ্ন রেখে চলে, যারা নিজেদের মালিককে ভয় করে।” (সূরা আর রাদ- ২০)

“পিতামাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়ে শরীক করতে বলে যার জ্ঞান তোমার নাই, তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তার সাথে সদ্ব্যবহার কর। যে আমার দিকে প্রত্যাবর্তন করে তার পথ অনুসরণ করো। (সূরা লোকমান- ১৫)

একবার আবু যার (রাঃ)কে উদ্দেশ্য করে মুহাম্মদ (সঃ) প্রশ্ন করলেন- হে আবু জার ঈমানের কোন কাজটি অধিকতর মজবুত। জবাব দিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। মহানবী (সঃ) বললেনঃ তা হচ্ছে আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব এবং তার জন্য ভালবাসা ও শত্রুতা।” (বায়হাকী- ইবনে আব্বাস)

মুমিনদের সম্পর্ক কোন ব্যক্তিগত সম্পর্ক নয়। প্রতিটা সম্পর্ক আল্লাহর জন্য। তাই তা সংরক্ষণে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা যাবে না। ব্যক্তির প্রতি সম্পর্ক এতখানি থাকা যাবে না যে, তার অনুপস্থিতিতে আল্লাহর পথে আমার টিকে থাকার উপর বিরূপ প্রভাব তৈরি করবে বরং সবকিছুই আল্লাহর জন্য হতে হবে।

সীমা লংঘন না করা

“পৃথিবীতে দাম্ভিকতা সহকারে চলো না। নিশ্চয়ই তুমি ভূপৃষ্ঠে বিদীর্ণ করতে পারবে না। এবং উচ্চতায় পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না। এসবের মধ্যে যেগুলো মন্দ কাজ, সেগুলো তোমার রবের কাছে অপছন্দনীয়।” (বনী ইসরাইল- ৩৭-৩৮)

রাগ, অহংকার, বাড়াবাড়ি করাকে নিষেধ করা হয়েছে। পৃথিবীতে চলাফেরার ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষায় অনেক বেশি নম্রতা Aej¤^b করতে হবে। আল্লাহর রাসূলের এটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল নম্রতা। এ কারণে তার … পরত। চারপাশে লোক সমাগম হত। নয়ত তার চারপাশে হতে তাই আচরণের ক্ষেত্রে সীমা লংঘন হতে সাবধান হতে হবে।

প্রতিদান প্রশান্তিতে সীমা রক্ষা করা

প্রতিদান শুধু আল্লাহর নিকট চাইতে হবে। প্রতিদানের আশায় অনুগ্রহ করতে আল্লাহ কোরআনে নিষেধ করেছেন। নবী-রাসূলগণ যখনই মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান জানিয়েছেন প্রক্যেকেই বলেছেন যে, কোন প্রতিদান বা বিনিময় তারা চান না। তাই আল্লাহর জন্যই যে সম্পর্ক দুনিয়াতে তার প্রতিদান কামনা না করে আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে। এমনকি কৃতজ্ঞতা পর্যন্ত আশা করা যাবে না।

পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইসলামের সৌন্দর্য ও সীমা ইসলামের জীবন বোধকে পরিপূর্ণতা দেয় এবং সফলতার প্রান্তসীমা দান করে। এর দৃষ্টান্ত অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। যুদ্ধের ময়দানে একজন মুমূর্ষূ ব্যক্তির কাছে পানি নিয়ে আসা হলে আর এক ব্যক্তি পানির জন্য আর্তনাদ করে উঠে। প্রথম ব্যক্তি দ্বিতীয় ব্যক্তিকে আগে পানি দিতে বললেন, কিন্তু তার কাছে পানি নিয়ে গেলে আর এক ব্যক্তি আর্তনাদ করে উঠে সুতরাং দ্বিতীয় ব্যক্তিটা ঐ ব্যক্তিকে পানি দিতে বললেন। এভাবে ষষ্ঠ জনের কাছে যাওয়া হল কিন্তু ততক্ষণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এভাবে প্রথম ব্যক্তি পর্যন্ত আসতে আসতে দেখা গেল প্রত্যেকেই মৃত্যুবরণ করেছে। সুবহানাল্লাহ কিন্তু অসাধারণ দৃষ্টান্ত ঈমানদারদের রয়েছে যারা আল্লাহর জন্যই অন্যকে অগ্রাধিকার দান করে। এজ্যনই আল্লাহ এই সম্পর্ককে নেয়ামত বলেছেন। আল্লাহর নবী মুমিনদের এভাবে সাবধান করেছেন।

“মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের উপর কায়েম থাকে। কাজেই তোমরা কাকে বন্ধু বানাও তা প্রক্যেকেই ভেবে চিন্তে নাও।

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত মুমিনদের এ সম্পর্ক আতরের মত যার সুগন্ধ দূর-দূরান্ত হতে পাওয়া যায় এবং যেখানে স্পর্শ করে তাই সুগন্ধিতে ভরে যায়।

ইউসুফ (আঃ) তাই এভাবেই দোআ করেছেন “আমাকে মুসলিম থাকা অবস্থায় মৃত্যু দাও এবং আমাকে সালেহীনদের মধ্যে শামিল করাও।” (ইউসুফ- ১০১)

×

Comments are closed.