সাজসজ্জা

আরবীয় লোকেরা গ্রাম্য ও মরু পরিবেশে বসবাস করত। তার দরুন অনেক লোকই পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যের ব্যাপারে তেমন সতর্কতা অবলম্বন করার প্রয়োজন মনে করত না। এ কারণে নবী করীম (সা:) সব সময়ই তাদেরকে পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতার অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করতেন।
এক ব্যক্তি নবী করীম (সা:)-এর খেদমতে হাজির হয়েছিল। তার দাঁড়ি ও চুল অবিন্যস্ত অবস্থায় ছিল। রাসূল (সা:) তার প্রতি এমনভাব ইঙ্গিত করলেন যে, মনে হলো তিনি হয়ত তাকে চুল দাঁড়ি ঠিকঠাক করার নির্দেশ দিচ্ছেন। নবী করীম (সা:) অপর এক ব্যক্তিকে দেখলেন তার চুল এলোমেলো। তিনি বললেনঃ
“ও লোকটি মাথার চুলগুলো ঠিকঠাক করার জন্য কি কিছুই পায়নি? ময়লা কাপড়-চোপড় পড়া অপর একটি লোককে দেখে তিনি বললেন, ও লোক তার কাপড় পরিষ্কার করে ধৌত করার কি কিছু পায়নি? (আবু দাউদ)

স্বর্ণ, রেশমী কাপড় ও হলুদ বর্ণের পোশাক পুরুষদের জন্য হারাম
হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন নবী করীম (সা:) রেশম ডান হাতে নিয়ে এবং স্বর্ণ বাম হাতে নিয়ে বললেনঃ এ দুটি জিনিস আমার উম্মতের পুরুষ লোকদের জন্য হারাম।
হযরত উমর (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি নবী করীম (সা:)কে বলতে শুনেছিঃ
“তোমরা রেশমী কাপড় পরিধান করবে না। কেননা যে লোক দুনিয়ায় রেশমী কাপড় পরিধান করবে, সে পরকালে তা পরতে পারবেনা।” (বুখারী, মুসলিম)
নবী করীম (সা:) এক ব্যক্তির হাতে স্বর্ণের আঙ্গুরীয় দেখতে পেলেন। তখন তিনি সেটিকে টেনে বের করে দূরে নিক্ষেপ করলেন এবং বললেনঃ “তুমি কি নিজ হস্তে আগুনের স্ফূলিঙ্গ ধরে রাখতে চাও?” নবী করীম (সা:) আমাকে হলুদ বর্ণের কাপড় ব্যবহার করতে নিষেধ করছেন। (মুসলিম)

নারীদের সুগন্ধী ব্যবহার করা হারাম
নবী করীম (সা:) বলেছেন, “যে নারীই সুগন্ধি লাগিয়ে ভিন পুরুষদের সান্নিধ্যে যায়, তার সুঘ্রাণ তারা পেয়ে যায়, সে ব্যভিচারিনী এবং তার প্রতি দৃষ্টিই ব্যভিচারী দৃষ্টি হয়ে দাঁড়ায়।” (নাসায়ী, ইবনে মাজাহ)।

নারীদের চলাফেরা
“মহিলারা যেন তাদের পা এমন জোরে না ফেলে যাতে করে তাদের লুকিয়ে রাখা সৌন্দর্য প্রকাশিত ও গোচরীভূত হয়ে যেতে পারে।” (সূরা নূর : ৩১)

মুসলিম মহিলার পোশাক
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বর্ণনা করেছেন, নবী (সা:) ইরশাদ করেছেনঃ
“দুই ধরনের লোক জাহান্নামী হবে। এক ধরনের লোক সেসব জালিম শাসক প্রশাসক, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মত চাবুক সব সময় ঝুলতে থাকবে এবং যা দিয়ে তারা লোকদের ওপর আঘাত করতে থাকবে। আর দ্বিতীয় হচ্ছে সেসব মেয়েলোক যারা কাপড় পরিধান করেও উলঙ্গ থাকে। তারা পুরুষকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করতে চেষ্টা করবে আর নিজেরাও পুরুষদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে। তাদের মাথা উষ্ট্রের ঝুঁকে পড়া চুটের মতো হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবেনা, তার সুগন্ধিও পাবেনা। যদিও জান্নাতের সুঘ্রাণ বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে।”

নারী-পুরুষের সাদৃশ্য পোশাক হারাম
নবী করীম (সা:) ঘোষণা করেছেন, “নারীর জন্য পুরুষালী পোশাক পরিধান করা এবং পুরুষের জন্য নারীসুলভ পোশাক পরা সম্পূর্ণ হারাম।” (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, নাসায়ী)

খ্যাতি ও অহংকারের পোশাক
পানীয়, খাদ্য ও পরিধেয় সব পবিত্র জিনিসই মুসলমানদের জন্য হালাল। তবে তাতে শর্ত হচ্ছে তা গ্রহণে যেন সীমালংঘন করা না হয় এবং কোনরূপ অহংকার ও গৌরব প্রকাশ না পায়।
“গৌরবে মগ্ন ও অহংকারী কোন ব্যক্তিই আল্লাহ পছন্দ করেন না।” (আল হাদীদঃ ২৩)
নবী করীম (সা:) বলেছেনঃ “যে লোক তার কাপড় অহংকার সহকারে টানবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রতি নজরও দিবেন না।” (বুখারী, মুসলিম)
রাসূলে করীম (সা:) বলেছেনঃ “যে লোক খ্যাতি ও সমৃদ্ধির পোশাক পরিধান করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে লাঞ্ছনা ও অবমাননাকর পোশাক পরিয়ে দেবেন।”

মাত্রাতিরিক্ত সৌন্দর্যের জন্যে আল্লাহ সৃষ্টি বিকৃতিকরণ
সৌন্দর্য বৃদ্ধির চেষ্টায় এমন সব কাজ করা, যার ফলে আল্লাহর সৃষ্টিই বিৃকত হয়ে যায়, ইসলাম আদৌ তা সমর্থন করে না। কোরআনে এ কাজকে শয়তানের অহী বা পরামর্শ বলে অভিহিত করেছেন। কোরআনের ভাষায় :
“আমি আমার অনুসরণকারীদের আদেশ করব। ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকেই বিকৃত করে দেবে।” (সূরা আন নিসা : ১১৯)
নবী করীম (সা:) বলেছেন, “যে মেয়েলোক দেহে উল্কি (সূঁচবিদ্ধ করে চিত্র অংকন) করে, যে তা করায়, যে দাঁত শানিত বানায় এবং যে তা বানাতে বলে, যে স্ত্রীলোক চুল বা পশম উপড়ায় এবং যে অপরের দ্বারা এ কাজ করায়, চুলে যে জোড়া লাগায় এবং যে এ কাজ করায়- রাসূলে করীম (সা:) সবার উপর অভিশাপ করেছেন। (মুসলিম, আবূ দাউদ)

খেজাব লাগানো
যেসব লোক বার্ধক্যে পৌঁছে গেছে, তাদের পক্ষে কালো খেজাব লাগানো বাঞ্ছনীয় নয়। কেননা মক্কা বিজয় কালে হযরত আবু বকর (রা:) তখন তার পিতা আবু কাহাফাকে রাসূলে করীম (সা:) এর কাছে উপস্থিত করালেন, তিনি দেখলেন, তার পিতার চুল একেবারে সাদা হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, “এ চুলের রং পরিবর্তন করে দাও। তবে কালো রং পরিহার কর।” (মুসলিম)
হযরত ইমাম জুহরী বলেনঃ “আমাদের মুখমণ্ডল যখন তরতাজা ছিল নব্যতা ও তারুণ্যপূর্ণ ছিল, তখন আমরা কালো খেজাব ব্যবহার করেছি। কিন্তু যখন আমাদের মুখমণ্ডল ও দাঁতে পরিবর্তন শুরু হয়ে গেল, তখন আমরা তা ত্যাগ করেছি।”

×

Comments are closed.